দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: জেলা পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে লাখো লাখো পূণ্যার্থীদের অংশগ্রহনে সম্পন্ন হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাপমোচন পুণ্যস্নান তীর্থ ভূমি ব্রহ্মপুত্র নদে লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব । মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া দুই দিন ব্যাপী স্নানোৎসব গতকাল বুধবার রাত ১০ টা ৪৭ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে সমাপ্ত ঘটে। পূণ্যার্থীদের স্নানোৎসব শেষ হলেও এ উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী লোকজ মেলা বসবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত পূণ্যার্থীদের মূখে উচ্চারিত, হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, চ্হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর, এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় লাখো লাখো পূণ্যার্থী আদি ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে অংশ নিয়েছেন। স্নানের সময় ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা , হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে তর্পণ করছেন আগত পূণ্যার্থীরা । মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৮ মিনিটে লগ্ন শুরুর পর স্নানোর্থীদের ঢল নামে ব্রহ্মপুত্র নদে। প্রচুর সংখ্যক স্নানোর্থীর আগমনে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার জুড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিলনা।
বুধবার ভোর থেকে আরও বাড়তে থাকে পূণ্যার্থীদের ভীর। ১৯টি স্নানঘাটে দল বেধে, সপরিবারে কেউবা এককভাবে ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী স্নানে অংশ নিচ্ছেন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা। প্রতিটি স্নানঘাটেই রয়েছে স্নানার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। বিশেষ করে রাজঘাট ও গান্ধীঘাটে স্নানোর্থীদের সমাগম চোখের পড়ার মত। ৭ বছর আগে রাজঘাটের কাছে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার গুজবে হুড়োহুড়িতে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটে।
ঘটনাটি স্নানোর্থীদের স্মরণ থাকলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ভয় বা আতংক নেই বলে জানান তীর্থযাত্রীরা। এবার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে স্নানোৎসব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী লাঙ্গলবন্দ স্নানে অংশ নিয়েছেন। পূণ্যার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে লাঙ্গলবন্দ তিন কিলোমিটার এলাকা।
স্নানোর্থীরা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। এ দিকে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১ টার দিকে স্নানোৎসবের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমান।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান বলেন, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নে দেড়শথ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আধুনিক গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে এক সঙ্গে পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা যাবে। পূণ্যার্থীদের থাকার জন্য ডরমিটরী ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সুষ্ঠভাবে স্নান সম্পাদনের জন্য ১৮টি স্নানঘাটের নির্মাণও চলমান ।
এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্য়টন কেন্দ্রে পরিনত হবে লাঙ্গলবন্দ। মঙ্গলবার রাত ৯ টা ১৮ মিনিটে শুরু হওয়া এই পূণ্যস্নান শেষ হবে বুধবার রাত ১০ টা ৪৭ মিনিটে। অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ ও নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া স্নানোর্থীদের স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত আছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক মেডিকেল টিম।