দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ঘরে সন্ত্রাস লালন করে বাহিরে সভা-সমাবেশে সন্ত্রাস বিরোধী বক্তব্য দেয়াটা আমাদের রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। বাহিরে কে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কিংবা মাদকসহ নানাবিধ অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক কথা বলার পুর্বে কখনও বিবেচনা করছেনা যে নিজ ঘরেই বড়মাপের অপরাধীরা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে ১৯ আগস্ট শনিবার রাতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নিয়ে ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়েছে। হামলার ঘটনার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মহানগর বিএনপির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিলেও অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমানের সম্বন্ধী ভিকির নাম।
যা নিয়ে শহরময় চলছে আলোচনা সমালোচনা। অবশ্য পাগলায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন তিনি নাকি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার সেই নির্দেশ কি নিরিহদের বিরুদ্ধে ছিলো নাকি অপরাধীর বিরুদ্ধে। এমনটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
এদিকে, হামলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা আহত হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই হামলার ঘটনায় ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হলেও মূলহোতারা গ্রেফতার হয়নি। সেই ঘটনায় ছাত্র,দিনমজুর গ্রেফতার হলেও গ্রেফতার হয়নি ভিকি-নেছারগংরা। মামলায় ছাত্র-দিনমজুররা অঅসামী হলেও আসামী হয়নি ভিকি-নেছারগংরা।
অপরদিকে, গ্রেফতারকৃত ৩৮জনের মধ্যে সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী, রিক্সা চালক, ভ্যান চালন, হকার, দিনমজুরসহ ঘটনার সাথে সম্পৃক্তা নেই এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ১৯ আগস্ট শনিবার রাত ৯ টায় ১৩ নং ওয়ার্ডের তালা ফ্যাক্টরির মোড় এবং ঈদগাহ মাঠের সামনে তান্ডব চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় পথচারী, দোকানদার, পুলিশ সদস্যসহ ১২জন আহত হয়। এছাড়াও অন্তত ১৮টি দোকান ভাংচূর করে সন্ত্রাসীরা।
১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানের অনুসারী জুবায়ের আহম্মেদ অমিও গ্রুপের সদস্যদের খোঁজ করতে এসেছিল মাসদাইর কবরস্থান সংলগ্ন এলাকার নেছার ও সাব্বির গ্রুপের লোকজন। তবে অমিও গ্রুপকে না পেয়ে সড়কে মহড়া দিয়ে চলে যাওয়ার সময় তালা ফ্যাক্টরির সামনে বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে তারা।
মহড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে গেলে সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াতে আসা রূপগঞ্জের এক পুলিশ সদস্য তাদের ভিডিও করেন। এ সময় সেই পুলিশ সদস্য ও পাশের এক মুদি দোকানীকে কুপিয়ে যখম করে সন্ত্রাসীরা। মহড়া দেয়ার সময় রাস্তায় পথচারী যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়ে আহত করেছে নেছার ও সাব্বিরের সন্ত্রাসী গ্রুপ।
সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শি ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী অনুসন্ধানে জানাগেছে, অয়ন ওসমানের সম্বন্ধী ভিকি বাহিনীর সদস্য নেছার ও সাব্বিরের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। এরআগে ভিকি নির্দেশে নেছার-সাব্বির ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন, চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল।
এছাড়াও অয়ন ওসমানের সরাসরি শেল্টারে রয়েছে সন্ত্রাসী নেছার। বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে, রবিবার রাতে সন্ত্রাসী নেছার ও তার বাহিনীর সদস্যরা অয়ন ওসমানের সাথে দেখা করে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়েছে।
সর্বশেষ ১৯ আগষ্ট ভিকির নির্দেশে আধিপত্য বিস্তার ও শক্তির জানান দিতে এই মামলা চালিয়েছে নেছার-সাব্বির গ্রুপ। নাম না প্রকাশের শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একাধিক গোয়েন্দা পুলিশ। তবে নেছার ও সাব্বিরকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হলেও ভিকিকে গ্রেফতারের বিষয় এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এদিকে, এঘটনায় রবিবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানার এএসআই কামাল হোসেন বাদী হয়ে সাব্বিরসহ আটজনের নাম ও অজ্ঞাত আরো ৫০জনকে আসামী করে মামলা করেন। শহর ও শহরতলী বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিবি পুলিশ মামলার এজাহার নামীয় চারজনসহ মোট ৩৮জনকে গ্রেফতার করে। তবে এখনো নেছার-সাব্বির গ্রেফতার না হলেও গ্রেফতারকৃত ৩৮জনের মধ্যে ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয় এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের অফিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে সপ্তম ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীও রয়েছে।
এঘটনায় যে সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে এ ঘটনায় জড়িত নয়। জড়িত হচ্ছে মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকার স্বপনের ছেলে সাব্বির। আবার হাসান ও হোসেন নামে যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হচ্ছেন ইসদাইরের গনী মোল্লার ছেলে। মুল আসামী হাসান ও হোসেন অয়ন ওসমানের একনিষ্ট কাউসারের সহযোগি হাসান ও হোসেন। মুল ঘটনায় যাদেরকেই গ্রেফতার কিংবা মামলার আসামী করা হয়েছে তার ৯৫ভাগ নিরিহ মানুষগুলো।
এ বিষয়ে মাসদাইরের অনেক বাসিন্দা বলেন,এখানকার ঘটনায় উদোড় পিন্ডি ভুদোড় ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। মুল আসামীদেরকে অন্তরালে রেখে নিরিহ মানুষগুলোকে হয়রানি করছে। যেখানে ভিডিও ফুটেজে নেছারকে দেখা যাচ্ছে সেখানে মামলায় তার নাম নেই। তাহলে বুঝতে হবে এ ঘটনাটিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে শতভাগ।
তারা আরও বলেন, ভিকি ও নেছারগংদের বিরুদ্ধে মাসদাইর,উত্তর মাসদাইর টাগাড়পাড়,কেতাবনগরসহ কয়েকটি এলাকার মানুষের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত ৬মাসে এ বাহিনীর মাধ্যমে অনেকেই হামলা,ভাংচুর,লুটপাট,জুট সন্ত্রাসসহ চাদাঁরদাবীতে নিরিহ মানুষকে আটক করে রাখাসহ নির্যাতনেরও অভিযোগ রয়েছে। কেউ সাহস পায়নি তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। যার একমাত্র কারন তারা এমপি শামীম ওসমানের পুত্রা।
যদিও নজরুল ইসলাম নামে একজন থানায় অভিযোগ করলেও পরবর্তীতে ভয়ভীতির মাধ্যমে থানায় দায়েরকৃক সেই অভিযোগটিও প্রত্যাহার করাতে বাধ্য করেছে ভিকি-নেছারগং। স্থানীয়রা ক্ষোভের সাথে বলেন,এমপির এমন আচরনে আমরা অনেকটাই ক্ষুদ্ধ। এখানে তাদের সম্মানের জন্য নিরিহ পরিবারগুলো ভোগান্তির শিকারে পরিনত করেছে। যার ফলে আত্মীয়রা বেঁচে গেলো আর নিরিহরা ফেঁসে গেলো।
অপর এক এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় গ্যাং লিডার অমিও এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান এবং তোলারাম কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদের শেল্টারে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। কিছুদিন পর পরই বিভিন্ন গ্রুপের সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনার ঘটে।
এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারি না। গত ১৯ শে আগস্টের ঘটনায় মারামারি করেছে সন্ত্রাসী দুটি গ্রুপ অথচ ভুক্তভোগী হয়েছে নিরীহ মাসদাইরের জনগণ। এলাকার দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে, নিরীহ মানুষজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গরিব অটোচালক শিবলীকে নির্মমভাবে কোপানো হয়েছে। সে এখন তার দুটি চোখ হারিয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।