দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও তার অনুসারীরা। একদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও অন্যদিকে বিএনপির পরিচিতি নেতাদের মাঝে (নারায়ণগঞ্জ-৪) ফতুলøা-সিদ্ধিরগঞ্জের কিছুসংখ্যক নেতা সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে রাজনীতি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, শামীম ওসমান বহুবার গিয়াস উদ্দিনকে আক্রমন করে বক্তব্য রেখেছেন এবং তিনি তার বাহিনী ও বিএনপির মধ্যে থাকা তার প্রেসক্রিপশনে পরিচালিত বিএনপির সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতৃবৃন্দ। আর গিয়াস উদ্দিন একাধিকবার নিজে অভিযোগ করেছেন শামীম ওসমান এমপি হওয়ার সুবাধে তার প্রভাবকে অবৈধ ভাবে ব্যবহার করছেন গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে। গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার পেছনে শামীম ওসমানের হাত রয়েছে বলে গিয়াস উদ্দিন বার বার বেশ জোরালো ভাবেই অভিযোগ করেছেন।
তিনি বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করেছেন যে এমপি শামীম ওসমান গিয়াস উদ্দিনকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছেন। তাই শামীম ওসমান বার বার রাজনীতির নামে হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও গিয়াস উদ্দিনের অভিযোগ। আর এসব কারণে যতদিন যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। কারণ এরই মাঝে এই আসনের রাজনীতিতে বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন গিয়াস উদ্দিন।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন এমন আরো একজন হলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম। অথচ এদের কাউকেই শামীম ওসমান কখনো আক্রমণ করে বক্তব্য দেননি। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা সহ নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের আরো অনেকে মনে করেন শামীম ওসমান আসলে এদের কাউকেই গোনায় ধরেননি বা তার নিজের রাজনীতির জন্য প্রতিদ্ব›দ্বী মনে করেননি। কিন্তু গিয়াস উদ্দিনকে তিনি বরাবর-ই প্রতিদ্ব›দ্বী মনে করেন এবং তার সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে তিনি একবার হেরেও গিয়েছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক হন। তারপর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে কাজ শুরু করেন, তিনি সফলও হন। ২০২৩ সালের ১৭ জুন জেলা বিএনপির সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হন। অতীতের চেয়েও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী। আর এ কারণেই শামীম ওসমান তার বাহিনী ও বিএনপির মধ্যে থাকা তার প্রেসক্রিপশনে পরিচালিত বিএনপির সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের দিয়ে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং তার দুই ছেলে ও অনুসারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের উপর মামলা-হামলা সহ পুলিশি হয়রানি অব্যাহত রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের ছেলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জি এম সাদরিল ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব কায়সার রিফাতের বিরুদ্ধে দফায় দফায় দেয়া হয়েছে একাধিক মামলা ও প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে পুলিশি হয়রানি।
অন্যদিকে গিয়াসউদ্দিনের অনুসারী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলামকে পুলিশি হয়রানি সহ সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কর্তৃক হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ফতুলøা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল বারি ভুইয়ার উপরও সন্ত্রাসী হামলা করা হয়। তাকেও একাধিকবার পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
এদিকে গিয়াসউদ্দিনের অনুসারী ফতুলøা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেনকে দফায় দফায় করা হচ্ছে পুলিশি হয়রানি। ফতুলøা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন নেতৃত্ব পাওয়ার পর থেকেই ফতুলøার বিএনপির রাজনীতিতে গিয়াস উদ্দিনের অনুসারী হওয়ায় বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে গেছেন। আর সে কারণেই জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিনের হাতকে যেন শক্তিশালী করতে না পারে সেইজন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তার অনুসারীদের পিছনে। ফতুলøা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন ও তাদের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলার ভয় সহ নানা ফন্দি করছেন এ কুচক্রী মহল।
তাদের নেতৃত্বে যেসকল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয় তাদেরকে সভা-সমাবেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না। শামীম ওসমানের প্রেসক্রিপশনে পরিচালিত সুবিধাবাদী বিএনপির নেতা ও নামধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে মামলার হুমকি করতে দেয়া হচ্ছে না সভা-সমাবেশ। বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সভা-সমাবেশে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের দোকানপাটে করা হয় অবরুদ্ধ। রাত হলেই তাদের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যরা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় কথিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফতুলøা থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমিন শিকদারের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা করেন।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা আরো জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের অনুসারী ফতুলøা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলী, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বিলøাল হোসেন, কাশীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাইনুল হাসান রতন ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন সহ জেলার অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে দফায় দফায় দেয়া হয়েছে একাধিক মামলা ও প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে পুলিশি হয়রানি। শামীম ওসমান তার বাহিনী ও বিএনপির মধ্যে থাকা তার প্রেসক্রিপশনে পরিচালিত বিএনপির সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের দিয়ে নানা ধরনের হয়রানি সহ দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করে চলেছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানের রাজনীতিতে গিয়াসউদ্দিন বিরাট ফ্যাক্টর হওয়ার কারণে তিনি নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতে উঠেছেন।
কিন্তু এ সময়ে এসে শামীম ওসমান ও তার বাহিনীদের তৎপরতার কারণে রাজনৈতিক ভাবে আরো লাভবান হচ্ছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। এতে বিএনপির ভেতরে গিয়াস উদ্দিনের অবস্থান আরো মজবুত হচ্ছে এবং এন্টি আওয়ামী লীগ ভোটারদের মাঝেও তার প্রতি সহানুভুতি বাড়ছে। তাই এবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে যদি শামীম ওসমানের সাথে গিয়াস উদ্দিনের প্রতিদ্ব›দ্বীতা হয় তাহলে গিয়াস উদ্দিনের জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করেন নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল।
আর এ কারনেই নতুন করে গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দিয়ে তাকে মাঠ ছাড়া করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এখন প্রকাশ্যে মাঠে নেমে দলের জন্য ভুমিকা রাখতে পারছেন না।