দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নির্দলীয় সরকার এবং গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপির ডাকা দ্বিতীয় দফার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির আজ রোববার প্রথম দিন চলছে। এ দফায় ৪৮ ঘণ্টার সড়ক-রেল-নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে এটি বিএনপির দ্বিতীয় দফার অবরোধ কর্মসূচি। এর আগে ৩১শে অক্টোবর থেকে দোসরা নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিনের অবরোধ পালন করেছে দলটি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১০টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া প্রথম দফার মতো বিএনপির অবরোধের দ্বিতীয় দফাতেও সারা দেশে দূরপালøার যান চলাচল বন্ধ থাকার খবর পাওয়া গেছে।
তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার রা¯Íায় যান চলাচল বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শনিবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এছাড়া দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর এবং ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্সকে শনিবার রাতে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানিয়েছেন, বিএনপি’র ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধ শুরুর আগেরদিন অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রোববার সকাল সাতটা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে কেবল রাজধানীতেই আগুন দেওয়া হয়েছে সাতটি বাসে। তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া পায়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং ভোলায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
মি. তালহা জানিয়েছেন, রোববার ভোর পাঁচটার দিকে রাজধানীর শ্যামপুর, ডেমরা এবং মিরপুরে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
এরপর সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গাজীপুরে আরো একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এরআগে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
প্রায় একই সময়ে এলিফ্যান্ট রোড, সায়েদাবাদ এবং গুলি¯Íানে আরো তিনটি বাসে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।
এছাড়া শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, গাজীপুরের ভোগরা এবং ভোলার চরফ্যাশনে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এসব ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়েছে।
গত ২৮শে অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিস্টার আলতাফকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
এর আগে ২৮শে অক্টোবরের সংঘর্ষের পর গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মির্জা আব্বাসসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গ্রেপ্তার সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আরো রয়েছেন তিনজন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, মজিবর রহমান সরোয়ার এবং খায়রুল কবির।
এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, মিডিয়া সেলের আহŸায়ক জহির উদ্দিন স্বপনসহ বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে বিএনপির বিবৃতি:
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে নিন্দা জানিয়েছেন।
রোববার দুপুরে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তিনি দলের দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও শাহজাহান ওমর এবং ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্সকে আটকের কথা জানিয়ে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
বিএনপি’র বিবৃতি:
কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে রোববার দুপুরে এই বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি
বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে মি. রিজভী বলেন, “সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন একদিকে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আহŸান জানাচ্ছে, অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ নেতাসহ সর্ব¯Íরের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারে ক্র্যাকডাউন শুরু হয়েছে। এটি যেন এক মহা তামাশা।”
গ্রেপ্তার চলমান থাকলেও বিএনপি তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যান চলাচল কম
দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথমদিন রোববার সকালে ঢাকার রা¯Íায় যান চলাচল কম লক্ষ্য করা গেছে।
সকালে ঢাকার ধানমন্ডি, পান্থপথ, গ্রিনরোড, কারওয়ান বাজার, তেঁজগাও, মহাখালী, গুলশান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, ফার্মগেট, বিজয় সরণিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সীমিত সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক এবং পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে।
যদিও পুরো শহরেই ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
এছাড়া রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ছিলো স্বাভাবিক দিনের মতোই।
তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রা¯Íায় যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
প্রথম দফার অবরোধের মতই রোববার সকালে ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপালøার কোন বাস ছাড়তে দেখা যায়নি।
গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলায় প্রতিদিন অন্তত ১২০০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাসের টিকেট বিক্রেতারা।
পরিবহন সংশিøষ্ট ব্যবসায়ী এবং কর্মীরা সায়েদাবাদের অবস্থাও একই রকম বলে জানিয়েছেন।
ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক:
অবরোধের মধ্যে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে।
রোববার সকাল থেকে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সব ট্রেন ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
যদিও স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম লক্ষ্য করা গেছে।
পুলিশের সতর্ক অবস্থান:
রোববার সকালে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
এর মধ্যে গুলশান চেকপোস্টে মোটর সাইকেল, গাড়ি এবং সাধারণ মানুষের ব্যাগে তলøাশি চালাতে দেখা গেছে।
এছাড়া প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলের টহল চোখে পড়েছে।
সুত্র: বিবিসি বাংলা