দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভূমি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ। এছাড়াও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা সহ স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হক।সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বিশ্বের সাথে তালে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এজন্য ডিজিটাল ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে।
এক্ষেত্রে দক্ষিন কোরিয়া আমাদের সহযোগীতা করছে। আমাদের মধ্যে কোথাও কোথাও কিছু ত্রুটি রয়েছে। এটা সংশোধনের দায়িত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নিতে পারবে না, মন্ত্রনালয়ও নিতে পারবে না। আমরা একটি সিস্টেমেরে মধ্যে দিয়ে এটিকে অপসারণ করতে চাই। অনুপস্থিত মালিকদের বিষয়ে এখানে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ প্রচারের মাধ্যমে চেষ্টা করবো তাদের কাছ পর্যন্ত বিষয়টি পৌছে দেওয়ার। কিন্তু শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু সরকারের না। এটা ওই মালিকের। কারণ যিনি মালিক তার জমি রক্ষা করার দায়িত্ব তার।
তিনি বলেন, এই কার্যক্রম প্রচারের জন্য আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছি। রেডিও, টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেসবুক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা আমরা এটি জানাবো। এরপরেও যদি কেউ জানতে না পারে, তাহলে দায়িত্ব সরকারের থাকবে না। আমরা চাই একটি ফ্রেশ/স্বচ্ছ ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসতে। দেশে বেশিরভাগ মামলাই হচ্ছে জমি সংক্রান্ত, যা এর মাধ্যমে কমে আসবে। আমি বলতে চাই, সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সৎ ভাবে কার্যক্রম পরিচালন করতে হবে। এ বিষয়ে একটুও ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, জনগনকেও সচেতন হতে হবে। জমি রেকর্ড করাতে আমি কেন টাকা দিবো ? এটা আমার অধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমরা তার উন্নয়নের ধারাকে অব্যহত রাখতে একটি স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা দিতে চাই। আমাদের নতুন প্রজন্ম যাতে সুন্দর ভাবে এটি ভোগ করতে পারে।
সচিব মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, এই কাজে নারায়ণগঞ্জ জেল প্রশাসক একটি শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তার মধ্যে ভুমি নিয়ে খুবই একটি পরিষ্কার একটি ধারনা আছে। আমি মন্ত্রীকে অবহিত করতে চাই এখানে ভূমির কাজে সেটেলমেন্টসহ বড় একটি ভূমিকা পালন করবে জেলা প্রশাসক এবং তার টিম। আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি কারণ, আজ যে ভূমি সংষ্কারের কাজ চলছে সেটার সূত্রপাত তিনিই ঘটিয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতায় ভূমিকা রাখেননি। ১৯৫৩ সালের ১১ দফার মধ্যে ২ দফা কিন্তু ভুমি ও খাজনা সংক্রান্ত বিষয় ছিলো। যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায় নিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেখানে ভুমি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ই-নামজারির বিষয়টা যদি জনগণ জানে, তাহলে তারা ঘরে বসে নামজারির আবেদনটা করতে পারবেন। এখন কিন্ত নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নিজের খাজনা নিজে দিতে পারে। কিন্তু অনেকে এটা জানে না বিধায় তারা ভূমি অফিসে যান। আমাদের কিন্তু সকল সিস্টেম দেওয়া আছে, জনগণকে শুধু বিষয়গুলো জানাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল জরিপে যাতে যার জমি, তার নামে রেকর্ড করা যায়। আমরা এই প্রচারণাটুকু করতে চাই। এই জরিপের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমি নজরদারী করবো। নারায়ণগঞ্জে জমি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ভূমি যে আইনটা রয়েছে, এটি কিন্তু এখনো আমার প্রয়োগ করতে হয়নি। এটি শুধু দেখিয়ে আমরা অনেকের জমি কিন্তু উদ্ধার করে দিয়েছি। সদর-বন্দরের মানুষরা যাতে তাদের জমিটি বুঝে নেয় এবং কোন সমস্যা হলে এসিল্যান্ড বা আমাকে জানায়। কেননা ডিজিটাল রেকর্ডটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনটা যাতে না হয় যে, মালিক কিন্তু তিনি এখানে থাকেননা; আর তাই তার জমিটা অন্য কারো নামে রেকর্ড হয়ে গেলো।
জানা যায়, কোরিয়ান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট-অপারেশন ফান্ড এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এস্টাবলিশমেন্ট অফ ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানাজমেন্ট সিস্টেম (EDLMS) প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হবে। প্রথম পর্যায়ে বন্দর থেকে ডিজিটাল জরিপের কার্যক্রম শুরু করা হবে। যা ধিরে ধিরে পুরো সিটি এলাকায় পরিচালিত হবে। ডিজিটাল জরিপের মাধ্যমে খুব সহজেই জমি পরিমাপ করা যাবে এবং একই সাথে জমির মালিকানা ও মাপের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, নাসিক প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, নাসিক ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির, নাসিক ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু, নাসিক ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অহিদুল ইসলাম ছক্কু, নাসিক ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।