দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সোমবার দুপুরে পদত্যাগ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ পরিচালনাকারী শেখ হাসিনাকে মাত্র ১৫ দিনের আন্দোলনের মাধ্যমে ত্যাগ করাতে বাধ্য করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা।
বাকস্বাধীনতা ও গনতন্ত্রহীন এক বাংলাদেশে আবারো তা ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম এখন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের এ ব্যাপক সফলতাকে ধুলোতে মিশাতে উঠে পড়ে লেগেছে বিএনপির কথিত নেতাকর্মীসহ দুবৃর্ত্তকারীরা। অথচ দেশের এ মহান বিজয়ে তাদেরকে কোন সম্পৃক্ততাই ছিলনা।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে এমন সংবাদ শোনার পরই ফতুল্লা থানাধীন কয়েকটি এলাকায় ভাংচুর,অগ্নিকান্ড,লুটপাটসহ ব্যাপক তান্ডবলীলা চালায় বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদলসহ দুবৃর্ত্তরা।
ফতুল্লার কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায় দুবৃর্ত্তদের তান্ডবলীলার ধ্বংসযঞ্জ। কাশিপুরের বাঁশমুলি এলাকায় প্রায় হত্যাসহ প্রায় আড়াই ডজন মামলার আসামী রিয়াজ প্রধানের ছেলে রাজু প্রধান বাহিনী হামলা চালায় আলহাজ আহমেদ হোসেন রাজু বাসভবনে। এ সময় আহমেদ হোসেন রাজুর বাসায় হামলা চালিয়ে ঘরে থানা প্রতিটি জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় ও ঘরে থাকা মুল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
আহমেদ হোসেন রাজু বাড়িতে হামলায় চালিয়ে রাজু প্রধানসহ তার সহযোগিরা প্রতিটি জানালার কাঁচগুলো ভেঙ্গে ফেলে এবং বাড়ির প্রধান ফটকটি ( এসএস দ্বারা তৈরী ) সেটি খুলে নিয়ে যায়। এবং তার পরিবারের সদস্যদের হুমকী নিয়ে যায় যে তাদের বাড়ি নাকি দখল করে নেবে। আহমেদ হোসেন রাজুর বড় ভাই এবাদ হোসেনের ছেলে যুবলীগ নেতা আফজাল হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামী হচ্ছে রিয়াজ প্রধানের ছেলে রাজু প্রধান। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি হত্যা মামলাসহ প্রায় আড়াই ডজন মামলা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
তার বিশাল বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাঁশমুলিসহ আশপাশের বাসিন্দারা। আহমেদ হোসেন রাজুর বাড়ি ছাড়াও কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে গত ৩ দিনের প্রায় কোটি টাকার মুল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিয়েছে রাজু প্রধান ও তার বাহিনীর সদস্যরা। একই দিন মাসদাইর ফারিহা মোড় এলাকায় রমিজউদ্দিন রমু’র বাস কাউন্টারে হামলা চালিয়ে উত্তরবঙ্গগামী একাধিক গাড়ি ভাংচুর করেছে ফেরদৌস,জাহিদ,শুভ এবং আলাউদ্দিন ওরফে ইদা মাহাজনের সাগরসহ সঙ্গীয়রা। এ সময় বাস কাউন্টারের পাশে থাকা একটি চায়ের দোকানে লুটপাট চালায় তারা।
হামলা চালিয়ে কাউন্টারের চারটি সিসি ক্যামেরা নিয়ে যায় এবং চায়ের দোকানের সমস্ত মালামাল লুটে নিয়ে পুরোটাই শূন্য করে ফেলে। এ সময় হামলাকারীদেরকে রমিজউদ্দিন রমু’র বড় মেয়ে বাধা প্রদান করলে তার গলায় থাকা পৌনে ২ ভরি ওজনের একটি স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
ফতুল্লা থানার আশপাশের কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে দোকানের তালা ভেঙ্গে লুটপাট ও মুল্যবান মালামাল,বাড়িতে প্রবেশ করে মুল্যবান মালামাল নেয়ার পাশাপাশি ঘর থেকে টাকা-স্বর্নালংকারসহ মুল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এছাড়াও কয়েকটি ইন্ড্রাষ্টিতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটিয়েছে দুবৃর্ত্তরা।
সোমবার বিকেলের পর থেকেই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আশংকাজনক হারে বেড়েছে চুরি,ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে চুরি-ডাকাতি,বাড়ির মালিকের কাছে চাদাঁ দাবী এবং বাড়ির মালিক তা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই ভাংচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে দুবৃর্ত্তরা।
ফতুল্লার রেলষ্টেশন এবং খোজপাড়া এলাকায় বিএনপি নেতা মুসলিমের নেতৃত্বে আনসারের ছেলে শান্ত,করিমের ছেলে স্বপন,ভাগিনা আলামিন,রোমানসহ সঙ্গীয়রা এলাকায় বেশ আতংক ছড়িয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। মুন্সিগঞ্জ থেকে আগত জামাই মোকতারের ফতুল্লা পাইলট স্কুল সংলগ্ন এলাকায় তার একটি বাড়ি ও দাপা খোজপাড়া এলাকায় ২টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাটের ঘটনা ঘটায় তারা। এ সময় তারা বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাও নাকি নিয়ে গেছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও আওয়ামীলীগ সমর্থিত ব্যক্তিদের বাসাবাড়ি,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,দলীয় অফিসও নাকি ভাংচুর করেছে তারা। অনেকের মাছের খামার থেকে মাছ নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে দুবৃর্ত্তদের বিরুদ্ধে। বক্তাবলীর রামনগর বিসমিল্লাহ মার্কেট এলাকায় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সদু মেম্বারের জমিও নাকি দখল করে নিয়েছে বিএনপি-জামাত জোটের অন্যতম নেতা আক্তার ও মোক্তারগংরা। এমনটাই অভিযোগ করেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সদু মেম্বার। আলীরটেকের গঞ্জকুমারিয়া এলাকায় আওয়ামীলীগের অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়ে এমনটা জানালেন গঞ্জকুমারিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.ওসমান গনি।
এছাড়াও ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী শরীফ হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান শরীফ হোসেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই হঠাৎ করে বিএনপির কিছু নেতাদের সাথে দুবৃর্ত্তরা একত্রিত হয়ে পুরো থানা এলাকাতেই তান্ডবলীলা চালাচ্ছে যার মুল হচ্ছে আইন-শৃংখলাবাহিনীর অনুপস্থিতি। বিগত সরকার সাধারন শিক্ষার্থী ও জনতাকে দমন-পিড়নের কাছে মাত্রাতিরিক্তভাবে ব্যবহার করেছে পুলিশ প্রশাসনকে। দেশের প্রত্যন্তস্থানে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষ নিহতের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ সাধারন মানুষ।
এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ জনতা দেশের বিভিন্ন জেলায় থানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা চারিয়ে অনেক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে যা বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এখন স্বজনহারা পরিবার কিংবা সাধারন মানুষের রোষানলে আবারও পুলিশের প্রানহানির ঘটনা ঘটতে পারে মর্মে দেশের বেশীরভাগ থানাই এখন পুলিশ শূন্য।
যার ফলে ফতুল্লা থানাধীন এলাকাগুলোর সাধারন বাসিন্দাগন এখন পুরোটাই নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। আইন-শৃংখলাবাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে নামধারী কিছু বিএনপি নেতাদের সাথে দুবৃর্ত্তরা একত্রিত হয়ে চালাচ্ছে লুটপাট,হামলাসহ নানা প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা।
আর এ সকল হামলা,ভাংচুর লুটপাট ও জবর দখল সর্ম্পকে স্থানীয়রা জানান, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনে দেশের কোন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহন ছিলনা। বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করার পুরোটাই কৃতিত্ব দেশের ছাত্রসমাজের। ছাত্র সমাজের এ কৃতিত্বকে মুহুর্তের মধ্যেই শেষ করার পায়তারায় নেমেছে কথিত বিএনপি নেতা ও দুস্কৃতিকারীরা। সারা দেশের ন্যায় ফতুল্লা এলাকাতে যেন ঐ সকল দুস্কৃতিকারীরা ছাত্র সমাজের এ সফলতার প্রদীপটি যেন নিভে না যায় সেদিকে জয়ী ছাত্রসমাজসহ সমাজের সকলস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
ফতুল্লা থানাধীন এলাকায় বসবাসকারীরা তাদের জানমাল নিরাপত্তার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ফতুল্লা এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনা কর্মকর্তাদের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।