দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ মাজহারুর ইসলাম জোসেফ যদিও তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ব্যানারে গত দুই বছর যাবৎ মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে কাগজে কলমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বা মহানগর যুবদলের কোথাও তার নামের ছিটে ফোঁটাও নেই তবুও তিনি নামধারী যুবদলের সিপাহী।
এক সময়ে ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও দাপুটে নেতা। গত বিএনপির শাসনামলে তার দখলে ছিলো শহরের হাবিব কমপ্লেক্স, রিভারভিউ ও ফারজানা টাওয়ারে অবস্থিত সকল গার্মেন্ট ও হোসিয়ারী। শুধু তাই নয়, ক্ষমতার দাপট দেখি নাসিক ১৫নং ওয়ার্ডে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ছিলো তার দখলে।
পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার (আজাহার কমিশনার) ছিলেন সাবেক পৌরসভার কমিশনার। ফলে এর প্রভাবও ছিলো তার মধ্যে। পিতা ও তার নিজের প্রভাব খাটিয়ে শহরে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজী ও মাদকসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যার সাথে জোসেফ জড়িত ছিলো না। এক সময় তিনি নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে যান বলে জানাগেছে।
২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতাচুত্য হলে কিছুদিনের জন্য ঘা ঢাকা দেন তিনি। পরে তাকে ফিরিয়ে আনেন পিতা আজাহার কমিশনার। মাদকাসক্ত জোসেফ তখন সারাক্ষণ মাদক নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মাদক নিতে নিতে এক সময় জোসেফ পাগলের মত হয়ে যায়। মুখে উল্টাপাল্টা যা আসতো তাই বলতো জোসেফ। আর মানুষ তখন তা শোনে হাসতে থাকতো। এক কথায় একদম জিরোতে পৌছে যায় জোসেফ। পরে তাকে বেশ কয়েকমাস মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে রেখে সুস্থ করে আনেন পিতা আজাহার।
জোসেফ সুস্থ হলেও ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পুরো ১২ বছর থাকেন দলের বাইরে। কিন্তু ২০২১ সালে যুবদলের ব্যানারে আবারও মাঠে দেখা যায় মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বঘোষিত যুবদল নেতা জোসেফকে। দলীয় সকল কর্মসূচিতে মিটিং মিছিল নিয়ে জোসেফকে অংশগ্রহন করতে দেখা যায়।
তবে দীর্ঘ বহুবছর দলের বাইরে থাকায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে মেনে নিতে চায়নি। ফলে প্রতিটি প্রোগ্রামে জোসেফ উপস্থিতি হলেই শুরু হতো বিশৃঙ্খলা। প্রায় সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে হাতা হাতি ও লাঠিসোটা নিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে জোসেফকে।
২০২৩ সালের শেষের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের সমযোতায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতারা তাকে গ্রহণ করে। সেই থেকে মহানগর বিএনপির সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে সকল কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।
এদিকে চলতি মাসের গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই জোসেফ আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠে। আবারও শুরু করে দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি। বর্তমানে তার লোকেরা বিভিন্ন সেক্টর দখল করে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পুরনো সেক্টরগুলো, যেগুলো আওয়ামী লীগ শাসনামলে তার হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিলো সেগুলো আবারও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তিনি। তবে এসব দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে বিএনপি তথা তারেক রহমানের কড়াকড়ি নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা কর্ণপাতই করছেন না।
অথচ প্রতিটি কর্মসূচিতেও তাকে বলতে শোনা গেছে, বিএনপি বা যুবদলের কোন নেতাকর্মীরা যদি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন দখলদারিত্ব বা চাঁদাবাজীতে লিপ্ত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু বাস্তবতার সাথে তার এ বক্তব্যের কোন মিল খোঁজের পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন যুবদল কর্মীরা বলেন, তিনি (জোসেফ) মুখে বলেন এক, কাজে আরেক। অর্থ্যাৎ কথার সাথে তার বাস্তবতার কোন মিল নেই।
হাসিনার পতনের পর জোসেফ ও তার বাহিনীর লোকেরাই সর্বপ্রথম বিভিন্ন সেক্টর দখল করেছে। দলের কঠিন নির্দেশনা থাকা সত্বেও তিনি তা মানছেন না।
তারা বলছেন, জোসেফকে যদি এখনই না থামানো যায়, তাহলে তিনি গোটা শহর খেয়ে ফেলবেন। এতে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। বিএনপির বদনাম হবে। তাই জোসেফের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দলীয় শীর্ষ নেতাদের প্রতি অনুরোধও জানিয়েছেন যুবদলের ওই কর্মীরা।
এ বিষয়ে মাজহারুর ইসলাম জোসেফ বলেন, যখন কোন রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তন হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই এতদিন যারা ক্ষমতায় থেকে সুবিধাভোগ করেছে পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সেখানে অন্যরা আসবে। এটা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম।
কিন্তু আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন, ১নং গেট থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত কোন মারামারি, কাউকে হুমকি-ধমকি, চাঁদাবাজি বা জোরপূর্বক কোন কিছু করা হচ্ছে না। যদি আপনি এ ধরনের কোন তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি খোঁজখবর নিন, আমি আপনার সাথে আছি।
এ ধরনের কিছু হয় নি আর এমনটা আমরা কাউকে করতেও দিবোনা। আমাদের মানসম্মান আছে, কারন আমরা রাজনীতি করি। এটা একধরনের সাবোটাজ।