দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দিরা বিদ্রোহ করে সেখান থেকে পলাতক তিন ফাসিঁর দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) জেলার আড়াইহাজার থানাধীন পাঁচরুখি বাজার এলাকা হতে আড়াইহাজারের নয়াগাঁও গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে মোসাদ্দেক @ সাদেক আলী (৩২), একই গ্রামের ইফনুস আলীর ছেলে মোঃ জাকারিয়া (৩২), এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন চর মুক্তারপুর এলাকা হতে হাজী কামাল দেওয়ানের ছেলে মোঃ জুলহাস দেওয়ান (৪৫) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
র্যাবের এএসপি সনদ বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে,বিদ্রোহের সময় বন্দিরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে বন্দিরা চলমান দাঙ্গা-হাঙ্গামার মধ্যে দক্ষিণ অংশের পেরিমিটার ওয়াল ভেঙ্গে গর্ত করতে থাকলে তা প্রতিহত করা হয়।
এ প্রতিহতকালীন সময়ে অন্য দিকে কারা অভ্যন্তরের বৈদ্যুতিক খুঁটি উপরে ফেলে মই বানিয়ে পশ্চিম দিকের দেওয়াল টপকে বেলা ১টা থেকে ২টার মধ্যে ২০৩ জন বন্দি পালিয়ে যায় এবং বুলেট ইনজুরিতে ৬ জন বন্দি মারা যায়। মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রাপ্ত পলাতক আসামীরা দেশে বিশৃঙ্খলা এবং সামাজিক অপরাধ করতে পারে বিধায় তাদের গ্রেফতার করতে র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীমোসাদ্দেক এবং জাকারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন নয়াগাঁও এলাকায় জনৈক বারেক চৌধুরী নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে হাঁস ওমুরগী চুরির ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারেক চৌধুরীর বাড়িতে একটি সালিশ/বৈঠক হয়। সালিশেশামীম ভুইয়া (৪১), মোসাদ্দেক আলী (৩২) ও জাকারিয়া (৩২) চুরির সাথে জড়িত বলে একই গ্রামের ফজলুল মোল্লার ছেলে মোঃ শামীম স্বাক্ষ্য দেন। চুরির ঘটনায় স্বাক্ষী দেওয়ার কারণে ভিকটিম মোঃ শামীমকে ক্রোধের বশবর্তি হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৯ মার্চ রাতে আসামী শামীম ভুইয়াও তার সহযোগী মোসাদ্দেক এবং জাকারিয়া মিলে ভিকটিম মোঃ শামীমকে নয়াগাঁও গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে ডেকে নিয়ে যায়। আসামী শামীম ভুইয়া ও জাকারিয়া ভিকটিমের হাত-পা চেপে ধরে এবং আসামী মোসাদ্দেক ভিকটিমকে ছুরি দিয়ে জবাই করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের বাবা উক্ত ঘটনায় বাদী হয়ে ৩০ মার্চ ২০০৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
যার মামলা নং- আড়াইহাজার থানার মামলা নং-২৪(৩)০৮, ধারা- ৩০২ দন্ডবিধি। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ১২ জুন ২০১৩ তারিখ তাদেরকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী মোসাদ্দেক আলী (৩২) কে ০৬ এপ্রিল ২০০৮ তারিখ ও জাকারিয়া (৩২) কে ০৩ এপ্রিল ২০০৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে এবং পরবর্তীতে দুইজনকেই ১৮ জুন ২০১৩ তারিখ কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অপর আসামী মোঃ জুলহাস দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত একজন আসামী। ঘটনার দিন ভিকটিম সাহাদ অনেক অসুস্থ ছিল। ২০১৪ সালের ১৩ই অক্টোবর তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাবা জুলহাস মুন্সিগঞ্জের পশ্চিম মুক্তারপুরের নিজ বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে শিশু পুত্রের বাবা ও সাহাদ নিরুদ্দেশ ছিলেন। নিখোঁজ থাকার তিনদিন পর শিশু পুত্রের বাবা মোঃ জুলহাস দেওয়ান এর সন্ধান পাওয়া যায় ।
এ সময়ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে ছেলে হারিয়ে গেছে বলে নানা অজুহাতে আশ্রয় নেয় সাহাদের বাবা। এতে সন্দেহ হলে তাকে মুক্তারপুর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাবা স্বীকার করে যে সে সাহাদ কে হত্যা করেছে। শিশু পুত্র সাহাদের বাবার স্বীকারোক্তি মতে গত ১৬ অক্টোবর ২০১৪ সালে সাহাদের লাশ নারায়ণগঞ্জ জেলার কয়লাঘাটা এলাকায় একটি মুরগি ফার্মের পাশে ডোবা হতে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে স্ত্রী তানিয়া বেগম বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
যার মামলা নং-৪৬(১০)১৪, ধারা-৩০২/২০১ পেনাল কোড।দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষেদাম্পত্য কলহের জের ধরে নিজের পাঁচ বছরের শিশু পুত্র সাহাদ (০৫) কে হত্যার দায়েমুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজগত ইং ০৯ অক্টোবর ২০১৮ সালে বাবা মোঃ জুলহাস দেওয়ান (৩২) কে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন।তাকে ১৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখ মুন্সিগঞ্জ জেলা কারাগার এবং ২৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জুলহাস দেওয়ান এর বিরুদ্ধে নিম্মোক্ত মামলা চলমান রয়েছেঃ
জিএমপি এর কোনাবাড়ী থানার এফআইআর নং- ০৪ তারিখ – ১৫ আগস্ট ২০২৪, ধারা – ১৪৩/১৪৮/১৪৯/৩৫৩/২২৪/৪২৭/৩৩২/৩৩৩/৪৩৬/৩৪ পেনাল কোড ,মুন্সিগঞ্জ এর মুন্সিগঞ্জ সদর থানার এফআইআর নং- ৬১/৩৪৯ তারিখ – ২৭ জুন ২০১২ ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/পেনাল কোড,মুন্সিগঞ্জ এর মুন্সীগঞ্জ সদর থানার এফআইআর নং-৪৭/৩০৭, তারিখ -১২ এপ্রিল ২০১৪, ধারা- ১৯(ধ)/১৯(ভ) ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন,মুন্সিগঞ্জ এর মুন্সিগঞ্জ সদর থানার এফআইআর নং- ৪৪/২০৭, তারিখ – ২৭ জুন ২০১২ ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/১১৪/পেনাল কোড,মুন্সিগঞ্জ এরমুন্সিগঞ্জ সদর থানার এফআইআর নং- ১৩/২২৯, তারিখ – ১৪ জুন ২০১১ ধারা- ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/১১৪/৫০৬ পেনাল কোড।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।