দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ আলহাজ ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলু যিনি নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক প্রভাবশালী সাংসদ ও গডফাদার উপাধী পাওয়া শামীম ওসমানের বেয়াই। শামীমপুত্র অয়ন ওসমানের কাছে লাভলুর একমাত্র মেয়ে রেশমী’কে বিয়ে দেয়ার পর অনেকটাই বেপরোয়া গতিতে চলেছে লাভুলু পুরো পরিবারের সদস্যরা। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনাসহ দলের অনেক মন্ত্রী ও এমপি।
সেই তালিকায় লাভলু বেয়াই শামীম ওসমান পরিবারের প্রতিটি সদস্যই রয়েছেন। স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাংসদ শামীম ওসমান স্বপরিবারে পালাতে সক্ষম হলেও পালাতে পারেনি ওসমানের পরিবারের বেপরোয়া আত্মীয় লাভলুর পরিবারের কোন সদস্য। তাহলে তারা এখন কোথায় আছেন এবং কার হেফাজতে আছেন ?
নগরীর উত্তর নলুয়া এলাকার প্রয়াত আলহাজ মহিউদ্দিন খোকা ওরফে খোকা মহিউদ্দিনের ছেলে ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলু। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। নিজের পিতার পরিচয়ে শহর ও শহরতলীতে যতটা না প্রভাব খাটিয়েছেন তার চেয়ে কয়েক হাজার গুন প্রভাব খাটিয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকে। শহর ও শহরতলীর প্রতিটি স্থানে বিয়াই এর দাপটে কমিশন বানিজ্যে মেতে উঠে ছিলেন তিনি।
পাশাপাশি তার বড় ছেলে মিনহাজউদ্দিন আহমেদ ভিকি,যার নামটি ছিলো মাসদাইর-কাশিপুর-গাবতলী টাগারপাড় এলাকাতে একটি আতংকের নাম। প্রায় শতাধিক উঠতি বয়সী ছেলেকে নিয়ে গড়ে তোলেন অপরাধের সা¤্রাজ্য। তার সাথে ছিলো তার চাচাতো ভাই জ্যাকি ও নেছারগং।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভুক্তভোগী জানান,লাভলু ও তার ছেলে এবং ভাতিজাদের কারনে মুখ খুলতে সাহস পায়নি অনেকে। কারন তারা ছিলেন এমপি সাহেবের পরম আত্মীয়। লাভলু তার গুলশান সিনেমা হলের ২য় তলার অফিসে বসেই ২/১ জন বিশেষ পেশার ব্যক্তি এবং একাধিক ব্যক্তি নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বিভিন্ মানুষের জমি দখল-বিচার-সালিসসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডে। নিজের একটি মানবাধিকার সংগঠন ( বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল ) এর সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিচারের নামে অবিচারের একটি কারখানা তৈরী করেন।
সেখানে টাকা বিনিময়ে অপরাধীরা ন্যায় পেতেন আর নির্যাতনের শিকার মানুষগুলো হতেন অপরাধী। বিয়াই শামীম ওসমানের ক্ষমতাবলে তিনি বেগম রোকেয়া খন্দকার উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ বহন করতেন। জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার উপর প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে বিয়াই শামীম ওসমানের সাথে তাকেও দেখা গিয়েছে গুলি চালাতে। তবে কয়েকটি স্থানীয় গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে ৫ আগষ্টের পর নাকি তিনি তার রক্ষিতাকে নিয়ে পালিয়েছেন।
লাভলু ছেলে মিনহাজউদ্দিন আহমেদ ভিকি,যে নামটি সকলের কাছে আতংকের একটি নাম ছিলো। এমন কোন অপকর্ম নেই যা ভিকির মাধ্যমে হয়নি। ঝুট সন্ত্রাসী,বিচারের নামে প্রহসন,জমি দখল,অন্যের জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবী,অন্যের লিজকৃত জমির উপর নির্মিত দোকান দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের নামে হামলা,মাসদাইর পৌর শ্মশানের হামলা-ভাংচুরসহ সকল কাজেই পারদর্শী ছিলো এ ভিকি। অয়ন ওসমানের কাছে ছোটবোন রেশমীকে বিয়ে দেয়ার পর এতটাই বেপরোয়া ছিলো ভিকি যে সাধারন মানুষ তাকে ভাবতো ওসমানের পরিবারের একজন সদস্যঅ সেজন্য অনেকেই মিনহাজউদ্দিন আহমেদ ভিকির নামের পাশে যুক্ত করেছিলো “ভিকি ওসমান” বলে।
নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকাকালীন সময়ে সাবেক পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদের সময় একজন গ্রেফতার হয়েছিলো ভিকি ওসমান। গাবতলী টাগারপাড়,কেতাবনগর,চৌধুরী কমপ্লেক্স,ভোলাইল কাশিপুরসহ প্রতিটি স্থানেই ছিলো ভিকির একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার। ছোট বোনের স্বামী অয়ন ওসমানের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে জোড়পুর্বক ঝুট নামানো,অন্যের জমি দখলের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে যান এ ভিকি।
মাসদাইর তালাফ্যাক্টরী এলাকাতে একটি ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করতে গিয়ে ভিকির নেতৃত্বে তার চাচাতো ভাই নেছারসহ সঙ্গীয়রা ব্যাপত ভাংচুরসহ তান্ডবলীলা চালিয়ে ছিলো। সেই ঘটনার বিচার করেছিলো তার বাবা লাভলু ও বোন জামাই অয়ন ওসমান। তার কয়েকমাস পর আবাবো মাসদাইর এলাকাতে আরেকটি ওয়াইফাই অফিস দখল করতে গিয়ে সেখানে তান্ডবলীলা চালিয়েছিলো ভিকি ও নেছারগংরা। সেই ঘটনায় ঢাকা থেকে আগত একজন এসআইকেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিলো। সেই ঘটনায় এমপি শামীম ওসমানের নির্দেশে একটি মিথ্যা মামলা রুজু করা হয়েছিলো ফতুল্লা মডেল থানায়। সেই মামলায় ভিকি ও নেছারগংদের আসামী না করে নামের সাথে মিল রেখে মাসদাইর ও ইসদাইর এলাকার অনেক নিরীহ ছেলেদেরকে আসামী করা হয়েছিলো এবং সেই মিথ্যা মামলা অনেক নিরীহ ছেলেরা দিনের পর দিন জেলও খেটেছিলো।
এছাড়াও ভিকি ওসমানের নেতৃত্বে চাচাতো ভাই নেছার ও সঙ্গীয়রা মাসদাইর কবরস্থান থেকে চৌধুরী কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে রক্ষিত জেলা পরিষদের জমিতে লিজপ্রাপ্তদের দোকানগুলো জোড়পুর্বক দখলে নিয়ে সেখান থেকে মোটা অংকের ভাড়া উঠিতে নিতো। মাসদাইর পৌরশ্মশানে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সেখানে হামলা চালিয়ে ডোমদেরকে মারধর,ভাংচুর ও স্বর্নালংকার ছিনিয়ে নেয়ার নেতৃত্বে ছিলো ভিকি ওসমান। এছাড়াও মাসদাইর ও আশপাশ এলাকাতে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও নতুন বিল্ডিং নির্মানের সময় প্রচুর টাকা দিতে হতো ভিকি ওসমানগংদের।
জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে রুখতে পিতা লাভলু ও তাল ঐ শামীম ওসমান ও ভগ্নিপতি অয়ন ওসমানের সাথে রাইফেলস ক্লাব থেকে নেয়া অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে এলাপাতারি বৃষ্টির মত গুলি ছোড়েন এ ভিকি ওসমান।
একাধিক সুত্রে জানা যায় যে,৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সাথে তা তাল ঐ শামীম ওসমানও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ভারতে। সেদিন উত্তেজিত জনতা মাসদাইরে অবস্থিত লাভলু মিয়ার গুলশান ভবনেও হামলা চালানো হয়েছিলো। সে হামলায় তার বাড়িতে সামান্য ক্ষতিসাধনও হয়েছে। যদিও কয়েকদিন পর তার ঠিকও করা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক এলাকাবাসী জানান, সাংসদ শামীম ওসমান পরিবার নিয়ে পালাতে সক্ষম হলেও পালাতে পারেনি তার পরম আত্মীয় আলহাজ ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলুর পরিবার। তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে মাসদাইরের বাড়িতেই নাকি অবস্থান করছেন। এবং তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী।
আলহাজ ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলু ও তার ছেলে মিনহাজউদ্দিন আহমেদ ভিকি ও ভাতিজাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত। জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষনকারী বাপ-বেটা-ভাতিজাদেরকে গ্রেফতার করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানান ভুক্তভোগী সাধারন মানুষ।