আবারও নারায়ণগঞ্জে বিভক্তির রাজনীতির প্রমান দিলো জেলা ছাত্রদল। তবে মজার বিষয় হলো এই বিভক্তি দেখা গিয়েছে খোদ সংগঠনটির সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজিবের মধ্যে। আর তাদের এই প্রকাশ্যে কোন্দলের কারনে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে জেলা ছাত্রদলের সংগঠনটি।
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বুধবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদল যৌথ উদ্যোগে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেই সিদ্ধান্তর উপর ছাই দিয়ে রহস্য জনক কারনে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে বাদ দিয়ে কাচঁপুরে সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব আলাদা ভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানা যায়।
যা অনেকটাই পরিষ্কার বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত ছাত্রদলের এই জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দন্ড বিরাজমান। এর আগে গত রমজান মাসে জেলা ছাত্রদলের ইফতার পার্টিতে যোগদানের কথা থাকলেও সেখানেও সাধারণ সম্পাদককে দেখা যায়নি।
এদিকে, গত বছর ৫ জুন ১২ সদস্য বিশিষ্ট জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে এই দন্ডের সূত্রপাত হয়। আর তাদের এই দন্ডের কারনে জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি পুর্নাঙ্গ রুপে আসতে পারেনি বলে তৃণমূল ছাত্রদলের নেতাদের দাবি। তবে সাংগঠনিক দিক দিয়ে জেলাকে পিছিয়ে অনেকটাই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে মহানগর ছাত্রদল। তাই এবার মহানগর ছাত্রদল জেলার দন্ডকে গুছাতে তাদের নিজ উদ্যোগে যৌথ ভাবে কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সভাপতি রনি এগিয়ে আসলেও সাধারণ সম্পাদক সজীব হয়েছেন পিছ পা।
এবিষয় জেলা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতৃবৃন্দদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, রনি আর সজীবের মধ্যে দন্ডের মূল কারন সোনারগাঁ থানা ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে। সজীব চান এই কমিটি হবে তার ব্যক্তি কেন্দ্রীক নেতাদের দিয়ে। ঠিক এইক ভাবে রনিও চান প্রতিটি কমিটিতে থাকবে তার নিজেস্ব নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রনে। ঠিক এই বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে জেলা ছাত্রদলের পুর্নাঙ্গ কমিটির ক্ষেত্রে। যার ফলসূতিতে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক ছাত্রদলের নেতারা দুই ব্যক্তির বিভক্তির ফলে কমিটি পুর্নাঙ্গ না হওয়ায় নিজেদের অবস্থানে আসতে পারছে না।
এ বিষয় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, আসলে আমি নিজেও এ বিষয় কোন ব্যাখ্যা দিতে পারছি না। কারন আমার বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ নেই কমিটি দেয়ার নাম করে কোন নেতার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছি। আর আমি অনেক আগে থেকেই জেলা ছাত্রদলের পুর্নাঙ্গ কমিটি সাজাতে চেয়েছি কিন্তু সজীব আমাকে সহযোগীতা করেনি।
আমি তাকে এ বিষয় ফোন দিলে সে এড়িয়ে যায়। আমি অনেক বার চেস্টা করেছি কমিটির সবাইকে নিয়ে বসে কি সমস্যা সেটা জানার। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক আসে না। আপনারা দেখেছেন জেলা ছাত্রদলের ইফতার পার্টিতে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা এসে ছিলো অথচ সাধারণ সম্পাদক আসে নাই। তার কি সমস্যা সেটাও আমাকে বলে না। তারা আজকে আমাদের সাথে থাকলে কর্মসূচি যতটা ভাল হয়েছে, তারচেয়ে আর বেশী ভাল হতো।
এসময় তিনি উদাহারন দিয়ে বলেন, যিনি কষ্ট করে হালচাষ করে ফসল ঘরে তুলে তার কিন্তু সেই ফসলের প্রতি ভালবাসা থাকে। আর যে হাল চাষ করে না ফসলের প্রতি তার কতটুকু ভালবাসা থাকবে সেটা সবাই জানে। আজকে আমাদের এক সাথে কর্মসূচি পালণ করার কথা ছিলো। আমি সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি এবং সে আসবে বলছিলো। এখন কেন আসলো না সেটা আমি বুঝতে পারছি না।
এ বিষয় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব বলেন, এই কর্মসূচির বিষয় গতকাল রাতে আমার সভাপতি ছাড়া সবাই উপস্থিত ছিলো এবং সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা কাচঁপুর কর্মসূচি পালন করবো। আমরা সেটাই করেছি এখন তিনি একা যদি জেলার ব্যানার হাতে নিয়ে কর্মসূচি পালন করে তাহলে তো হবে না। কারন এটা কারো একার সম্পত্তি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক ২০০০ সালের ব্যাচ এর ছাত্র নেতাদের দিয়েই কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু আমাদের সভাপতি সেই নির্দেশনা না মেনে অছাত্রদের দিয়ে কমিটি আনতে চায়। যার ফলে তার সাথে আমার কিছুটা মতের অমিল রয়েছে।