ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র মানবতার কল্যাণকামী শ্রেষ্ঠ ধর্ম। পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধন করাকে এতোটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত মানবজাতির কল্যাণের জন্যে তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। ( সুরা আল ইমরান ১১০)।
অভুক্তদের কষ্টের ভাগীদার হতে মহান আল্লাহ রমজানের সিয়াম ফরজ করেছেন। দুঃখীর কষ্ট লাগবে যাকাত ফরজ ও সাদাকাতুল ফিতরের বিধান ওয়াজিব করেছেন।
আল্লাহ বলেন,যারা নিজেদের ধন সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে রয়েছে ১০০ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা-২৬১)।
আল্লাহ আরও বলেন, আর তাদের ধন–সম্পদে রয়েছে ভিক্ষুক ও বঞ্চিতের হক। ( সুরা যারিয়াত -১৯)।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন দয়া ও মহানুভবতার মূর্ত প্রতীক। ষষ্ঠ হিজরিতে খায়বার বিজিত হয়। নবম হিজরিতে যখন আরব উপদ্বীপ মুসলিমদের অনুগত। চারদিক হতে যখন বিপুল সম্পদ প্রেরিত হয় সবই তিনি অকাতরে বিলিয়ে গেছেন।
হযরত আয়েশার (রা) ভাষ্যমতে, নবী (সা.) এমনভাবে ইহকাল পরিত্যাগ করেছেন যে,তার পরিবার লাগাতার দুইদিন পেটভরে যবের রুটি খেতে পারেন নি।
আল্লাহর রহমত, বরকত ও সাওয়াব অর্জনের সবচেয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি, বিশেষত মানুষের প্রতি কল্যাণ ও উপকারের হাত বাড়িয়ে দেয়া।
সকল প্রকার মানব সেবামূলক কাজের জন্য অকল্পনীয় সাওয়াব ও মর্যাদার কথা অগণিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য কোনো মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে ততক্ষণ আল্লাহ তার কল্যাণে রত থাকবেন। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা যে মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকার করে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নেক আমল কোনো মুসলিমের হৃদয়ে আনন্দ প্রবেশ করানো,অথবা তার বিপদ, কষ্ট বা উৎকণ্ঠা দূর করা, অথবা তার ঋণ আদায় করে দেয়া, অথবা তার ক্ষুধা দূর করা।
আমার কোনো ভাইয়ের কাজে তার সঙ্গে একটু হেঁটে যাওয়া আমার কাছে মসজিদে এক মাস ইতেকাফ করার চেয়েও বেশি প্রিয়। যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের সাথে যেয়ে তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে কিয়ামতের কঠিন দিনে যেদিন সকলের পা পিছলে যাবে সেদিন আল্লাহ তার পা সুদৃঢ় রাখবেন। (মুনযিরী, আত-তারগীব ৩/৩৪৬-৩৫১, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/১৯১)
অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই। কোন মুসলিম না কোন মুসলিমের ওপর জুলুম করবে, না তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা তার অভাব মোচন করবেন।
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ-কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। (বুখারী ২৪৪২, – তিরমিযী ১৫২৬, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫০৪)
এ হাদিসটি মানবাধিকার রক্ষায় একটি মাইলফলক। হাদিসের প্রথম অংশে যে এক মুসলিমকে আরেক মুসলিম ভাই হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে এটা হলো উখুওয়াতুল ইসলাম বা ইসলামী ভ্রাতৃত্ব। অর্থাৎ এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। এখানে উল্লেখ্য যে, ভাই কখনো ভাইয়ের ওপরে জুলুম করবে না, অর্থাৎ মুসলিম ভাই মুসলিম ভাইয়ের ওপরে জুলুম করা হারাম।
তাকে কষ্টও দিবে না বরং তাকে সহযোগিতা করবে, সাহায্য করবে এবং তার পক্ষ হয়ে সব ধরনের বিপদাপদে তার সহযোগী হবে। এই সহযোগী হওয়াটা মাঝে মাঝে বাধ্যতামূলক হয়ে যায় মাঝে মাঝে তা কাঙ্ক্ষিত হয়ে থাকে।
ইমাম ত্ববারানী সালিম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে বিপদগ্রস্ত দেখে চলে যাবে না, বরং তার সহযোগী হবে। ইমাম মুসলিম আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করবে না।
হাদিসের আরেক অংশ হলো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তখন বান্দাকে সাহায্য করেন যখন সে তার ভাইকে সাহায্য করে। আর যে কোন মুসলিম ভাইয়ের দুনিয়া ও আখিরাতের কোন বিপদে সাহায্য করবে আল্লাহ রাববুল আলামীন তাকে সাহায্য করবেন।
এ হাদিসে মুসলিম ভাইয়ের দোষ গোপন করতে বলা হয়েছে, এটি একটি শর্তসাপেক্ষ বিষয়; তা যদি প্রকাশ করার চাইতে গোপন করা উত্তম হয়ে থাকে তাহলে গোপন, আর যদি প্রকাশ করা উত্তম হয় তাহলে প্রকাশ করবে।
এক্ষেত্রে আমরা দেখি ইমামগণ যে রাবীদের সমালোচনা করেছেন এটা হারাম গীবতের মধ্যে শামিল নয়, কারণ এখানে তার দোষ না বললে সমস্ত মুসলিম এক চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাদিস ৪৯৫৮)
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানবসেবা ও সমাজ কল্যাণের নির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি নবী (সা.) ও স্বীয় বাণী ও কর্মে একই আদর্শ জীবনভর প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন। শুধু নিজে প্রচার করেই ক্ষান্ত হন নি। নিজ কর্মেও এর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
সুতরাং প্রতিটি মুমিনের উচিত পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বাণীকে হৃদয়ে লালন করে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের নিমিত্তে মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগ করা।