দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম মাসদাইর বাড়ৈইভোগ এলাকার কথিত ছাত্রলীগ নেতা রানা ও সবুজ মন্ডলের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পশ্চিম মাসদাইর ফারিহা গার্মেন্টস সংলগ্ন এলাকার ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী শাওন আক্তার বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাদাত হোসেন আসামীদ্বয়কে গ্রেফতারের পরিবর্তে অভিযোগকারীকে মিমাংশা করার কথা বলে আসেন তিনি। আসামীর পক্ষালম্বন করে পুলিশের কাজ করা নিয়ে উক্ত এলাকায় চলছে ব্যাপক গুঞ্জন। আর অভিযোগকারীকে আপোষ-মিমাংশা করার কথা বলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন,আমরা গরীব বলে কি বিচার পাবোনা। বিচার কি বড় লোকের জন্য ?
গত ২৮ জানুয়ারী মৃত মোঃ সেকান্দর এর কন্যা ও ফরহাদের স্ত্রী শাওন আক্তার উল্লেখ করেন মোঃ নবী হোসেনের পুত্র মোঃ রবিউল ইসলাম রানা,মন্টু মন্ডলের পুত্র সবুজ মন্ডল সহ অজ্ঞাত নামা ৮/১০ জন সন্ত্রাসী গত ২৬/১/২০২০ ইং তারিখ রাত সাড়ে ১০ টায় আমার প্রতিবেশী মোসাঃ রুনা আক্তারকে বিবাদীগন ভিন্ন কৌশল গ্রহন করে বকুল মিয়ার বাড়িতে নিয়ে আটকাইয়া রেখে বিভিন্ন প্রকার অযোক্তিক দাবী ধাওয়া করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। বিষয়টি জেনে আমার স্বামী ফরহাদ হোসেন ও শ্বশুর রমিজউদ্দিন ঘটনাস্থলে গেলে উল্লেখিত সন্ত্রাসী ও বিবাদীগন আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং প্রাননাশের হুমকি প্রদান করে।
অপর দিকে ভিকটিম রুনা আক্তার বাদী হয়ে রানা,সবুজ মন্ডলকে বিবাদী করে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন। ২ টি অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এস আই শাহাদাৎ হোসেনকে। এ দিকে আসামীকে গ্রেফতার না করে তাদের পক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাফাই গেয়ে আসার পর স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া। গত ২৬ জানুয়ারী রাতে পুৃলিশের ভয় দেখিয়ে এক গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রানা ও সবুজ মন্ডলের বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করতে গেলে ঐ নামধারী ছাত্র নেতার হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নিতে শুরু করলে ফতুল্লা থানা পুলিশ পরিবেশ শান্ত করে। কিন্তু প্রভাবশালী দুই নেতাদের তদবিরে নামধারী ছাত্র নেতা রবিউল ইসলাম রানাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
গার্মেন্টস কর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশ তার জবানবন্দি নিলেও রানাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। বরং প্রভাবশালীদের তদবিরে ঘটনাটি ভিন্ন ঘাতে প্রভাহিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিউল ইসলাম রানা বাড়ৈভোগ খানকার মোড় এলাকার নবী হোসেনের পুত্র এবাং নিজেকে
ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আসছিল। ভূক্তভোগী রুবিনা ( ছদ্ম নাম) জানান, এর আগে আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে যায় উনি (রানা)। একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক আসে-এনিয়ে চাপ প্রয়োগ করে আমাদের কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় রানা। এঘটনার পর আমার ভাইকে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। এরপর থেকে প্রতিদিনই আমাকে ফোন করে দেখা করার কথা বলে আসছে উনি (রানা)।মঙ্গলবার রাতে তিনবার ফোন দিলে আমি কাজ শেষ করে তাদের অফিসে ( বাড়ৈভোগের বকুলের বাড়ির পাঁচতলায়) যাই। মোবাইলের বিভিন্ন কি এক ছবির কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন। আর টাকা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিবে বলে জানায়। টাকা নেই বললে আমাকে অবৈধ কাজের প্রস্তাব দেয়। পরে আমি কান্না করতে থাকি। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ভোক্তভোগীর চাচা স্থানীয় রমিজউদ্দিনকে জানায়। রমিজউদ্দিন ও তার পুত্র ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েকে কেন আটকে রাখা হয়েছে জানতে চাইলে রানা ও সবুজ হামলা চালিয়ে রমজিউদ্দিনকে আহত করে। পরে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হলে রানা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরী হলে ঘটনাস্থলে ফতুল্লা থানা পুলিশ ছুটে আসে। পডরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করে পরিবেশ শান্ত করা হয়।
একই সময় ছুটে আসেন রানার শেল্টার দাতা ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সদস্য শ্রী রঞ্জিত মন্ডল ও এনায়েতনগর ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাকারিয়া জাকির। পরে মেয়েসহ মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। একই সাথে মেয়ের কাছ থেকে নেয়া ২০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার দায়িত্ব নেন শ্রী রঞ্জিত মন্ডল। এদিকে, ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় ভোক্তভোগী থানা অভিযোগ করতে চাইলে বুধবার হুমকি দেয়া হয়। এতে ভীত হয়ে ভোক্তভোগী থানায় যেতে পারেনি।
এদিকে, এ ঘটনায় কোন অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন। তিনি জানান, রাতে খবর পেয়েই বিপুল সংখ্যক পুলিশ পাঠিয়ে পরিবেশ শান্ত করা হয়েছিল। এদিকে, ঘটনাস্থলে মোবাইল ফোনসহ মেয়েকে উদ্ধার করা হলেও কেন রানাকে গ্রেফতার করা হল না নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থলে মাদকও পাওয়া গিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা জানিয়েছেন। মূলত শ্রী রঞ্জিত মন্ডল প্রভাব খাঁটিয়ে রানা ও সবুজকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, এলাকার অসহায় গার্মেন্টস কর্মীদের বিভিন্ন ভাবে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে আসছিল বলে রানার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ভোক্তভোগী ও স্থানীয়রা যেসকল অভিযোগ করেছেন তার প্রমাণ এইসপ্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
আসামীকে আটকের পরিবর্তে অভিযোগকারীকে মিমাংশা করতে বলা সর্ম্পকে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহাদাত হোসেনের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং বিষয়টির তদন্ত করে দেখছি। শ্লীলতাহানীর বিষয়ে আমি আপোষ মিমাংশা করতে বলবো কেন তাছাড়া এবিষয়ে কারোর সাথে কোনরুপ কথা হয়নি আমার সাথে।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, আপোষ মিমাংশার কোন প্রশ্নই উঠেনা। আমিতো ওকে ( এসআই) কে বলেছে ওদেরকে ধরে আনতে তারপর আইনীভাবে যা করার দরকার সেটাই করবো।