দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রনাধীন মাসদাইর পৌর মহাশ্মশান। সনাতন ধর্মের মানুষগুলো মৃত্যুর তাদের শেষকৃর্তানুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন হয় এখানে। মাসদাইওে অবস্থিত এ মহাশ্মশানে যারা দ্বায়িত্বে রয়েছেন তারা প্রতিজন যেন একেকটি প্রভাবশালী ব্যক্তি। সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের আস্থাভাজনদের একটা আখড়া ছিলো এটি।
এখানে এখনও বহাল রয়েছে সাংসদ শামীম ওসমানের বন্ধু অ্যাড.খোকন সাহার ধর্ম ছেলে শান্তি ঘোষাল,ধর্মভাই সুজন সাহা, নগরীর ডাইলপট্রি এলাকার সংকর সাহা, শান্তি ঘোষালের ভাতিজা সবুজ, টানবাজার এলাকার সুব্রত কুমার সাহা, শামীম ওসমানের আস্থাভাজন রনজিত মন্ডল, পুলিশ লাইন এলাকার কিশোর বাবু এবং ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ^াস।
এদের মধ্যে শান্তি ঘোষাল ( খোকন সাহার ধর্ম ছেলে ) সিটি কর্পোরেশন অনুমোদিত শ্মশানের পুরোহিত। তার কাজ হলো লাশ আসলে পিন্ডদান করা,লাশের মুখে অগ্নিমন্ত্র পাঠ। তিনি সেটা না করে তা তার ভাতিজা সবুজকে দিয়ে সেগুলো করিয়ে থাকেন। অথচ সবুজ সেখানে সারাদিন গাজাখোরদের সাথে শ্মশানের বিভিন্ন চিপায় আড্ডাতে মশগুল থাকেন এবং গাজা খেয়ে টালমাতাল থাকেন। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় লাশ নিয়ে আগতদের সাথে জুলুম করা হয়।
শ্মশানের সৎকারের জন্য আসা একটি লাশকে একটা চিতাপিন্ডতে দক্ষিনা হিসেবে কেউ ১শত আবার কেউবা ২শ টাকা দেয়। কিন্তু উক্ত কর্তাবাবুদের নির্দেশক্রমে সবুজ সেটা না করে দাবীকৃত ২ হাজার টাকার বিনিময়ে চিতাপিন্ড করে থাকেন। লাশের সাথে আসা মানুষগুলোর বসার জন্য চেয়ার চাইলে সেটার জন্য ২০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় সবুজকে। অথচ ভক্তদের দেয়া উপহার চেয়ার টেবিলগুলো শুধুমাত্র লাশের সাথে আসা মানুষের ব্যবহারের জন্য।
শ্মশানের ভেতরে মায়ের জন্য ভোগ বা প্রসাদ দেয় অনেক অর্থশালী ব্যক্তি। কিন্তু সেই প্রসাদের বিভিন্ন সামগ্রী চাইল-ডালসহ বিভিন্ন জিনিসগুলো লাশ সৎকারে আসা মানুষের কাছে খিচুরী তৈরী করে টাকার বিনিময়ে তা সরিয়ে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অথচ মায়ের প্রসাদের যে পরিমান টাকা ও জিনিসপত্র শ্মশানের দেয়া হয় সে সর্ম্পকে শান্তি ঘোষালগং ছাড়া কেউ জানেনা কিংবা কখনও জানতেও দেয়না।
এছাড়াও একটি লাশের সাথে আসা ৫০/৬০ জনের তালিকা নিয়ে খিচুরী তৈরী করা হলেও সেটা ১৫/২০ কে দেয়ার পর তার সরিয়ে রাখা হয়। এবং পরবর্তীতে কোন লাশ আসলে সেই খিচুরীগুলোকে গরম করে তাদের মাঝে বিতরন করা হয় এবং খিচুরী তৈরীর জন্য প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। এছাড়াও একটি লাশ সৎকারের প্রায় ৪ মন লাকড়ির প্রয়োজন হলেও সর্বসাকুল্যে তার খরচ বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে ১৫/১৮ হাজার টাকা। অথচ পুরো লাশটি সৎকারের জন্য সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এ বর্ধিত টাকাগুলো উপরোক্ত কর্তারা সম্মিলিতভাবে ভাগাভাগি করে নিয়ে থাকেন।
ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে,পৌর শ্মশানে পুর্বে সভাপতি ও সেক্রেটারী দাবীদার সুজন সাহা ও শংকর সাহা,ক্যাশিয়ার দাবীদার পুলিশ লাইন এলাকার ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী কিশোর বাবু,মাসদাইর বাড়ৈভোগ এলাকার রনজিত মন্ডল,টানবাজার এলাকার রং ও কসমেটিকস ব্যবসায়ী ও মন্দিরের ধান্দাবাজ সুব্রত কুমার সাহা,পুরোহিত শান্তি ঘোষাল ও তার ভাতিজা সবুজগংদের সাথে শ্মশানের বর্তমানে সভাপতি কাউন্সিলর অসিত বরন একত্রিত হয়েই শ্মশানের ভেতরে নানা প্রকার অনিয়মের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে,পুরোহিত শান্তি ঘোষালের অঅস্কারায় তার ভাতিজা সবুল শ্মশানের ভেতরের ২য় তলায় মদ,গাজা ও নারী নিয়েও নাকি জম্পেস আড্ডা জমিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সনাতন ধর্মের লোকজন জানান, প্রায় দেড় বছর পুর্বে শ্মশানের ভেতরে হামলা-ভাংচুর-লুটপাট ও মারধরের ঘটনাটির মহানায়ক হচ্ছেন পুরোহিত শান্তির ভাতিজা সবুজ। তার সাথেই সাবেক সাংসদ এর নিকটাত্মীয়দের সাথে ঝগড়া ও মারামারি হয়। সেই ঘটনার পরই অসিত বরনের পরামর্শে শান্তি ঘোষাল তার ভাতিজা সবুজকে বরিশাল পাঠিয়ে দেন। সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হলেও অদৃশ্য কারনে তা পুরোটাই ধামাচাপা দিয়ে শান্তি ঘোষাল ও অসিত বরন বিশ^াস।
কারোর সাথে কোন কথা না বলেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি মেয়র বরাবর জমা দিয়েছেন অসিত বরন বিশ^াস। সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্মদাতা সবুজ বেঁচে গেলেও ফাসিয়ে দেয়া হয়েছিলো শ্মশানের একজন নিরীহ ডোমকে। এ কারনে তাকে চাকুরীচ্যুত করে পরিবারসহ সেখান থেকে বের করে দেয়ার নজীরবিহীন অবিচারের জন্ম দেন কাউন্সিলর অসিত বরন বিশ^াস। তারা আরও বলেন,পুরো শ্মশানটিকে অপরাধ ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন শান্তি ঘোষাল ও অসিত বরন বিশ^াসগং। শ্মশানের অভ্যন্তরে যে মাদক কেনা-বেচা হয় সেখান থেকে একটি অংশ যায় শান্তি ঘোষালের কোষাগারে।
শ্মশানের নতুন যে কমিটি মেয়র থাকাকালীন সময়ে গঠন করা হয়েছে সেখানে উপরোল্লোখিতরাই রয়েছেন। এখানে নতুন কোন সদস্যকে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছেনা শ্মশানের নিয়ন্ত্রক অসিত ও শান্তি ঘোষালগং। কারন নতুন কোন সদস্য উক্ত কমিটিতে নেয়া হলে শ্মশানের ভেতরে তাদের ধারা যে অপকর্ম ও অনিয়ম হচ্ছে তা হয়তবা করতে পারবেনা। সেই জন্য কমিটিতে নতুন মুখের আগমনের সুযোগ হয়না। সনাতন ধর্মের সাধারন মানুষের দাবী,কাউন্সিলর অসিত বরন ও পুরোহিত শান্তি ঘোষালগংদেও কবল থেকে পৌর মহা শ্মশানটি রক্ষা করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্রতিদিনই শ্মশানের অভ্যন্ত লাশ সৎকারে আসা সনাতন ধর্মের লোকদের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে চারটায় কালিরবাজার স্বর্নপট্রি গোবিন্দ এর শাশুড়ির লাশ সৎকারের জন্য আনার পর এক অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেন পুরোহিত শান্তি ঘোষাল। টাকা না দিলে লাশ সৎকার হবেনা এমন কথা বলার পরই শুরু হয় হট্রগোল। এ সময় শান্তি ঘোষাল,সুজন সাহা, ক্যাশিয়ার কিশোর, শান্তি ঘোষোলের ভাগিনা কৃষনার সাথে কালিরবাজার স্বর্নপট্রির মধুর সাথে কথা কাটাকাটি হয়।।
মধু বিস্তারিত জানতে চাইলে তাকে মারতে উদ্যত হন শান্তি ঘোষালের রাইটার কার্তিক। সেখানে লাশের সাথে আগতদের বসার জন্য গোপালকে চেয়ার নামাতে ২০০, লাকড়ির নামানোর জন্য ২০০ টাকা দিতে হবে। আবার খিচুরী পাকানোর মজুরি ১৫০০ টাকা এবং তার তৈরীর সরঞ্জাম ১০ কেজি চাউল,৫ কেজি ডাউল,আলু অন্যান্য সামগ্রীর জন্য সর্বমোট ৬ হাজার টাকা দাবী করলেই এ হট্রগোলের সুত্রপাত হয় বলে জানান লাশ সৎকারে আসা কয়েকজন মানুষ।
সনাতন ধর্মের মানুষের মতে,পুরো শ্মশানটিকে যেন শান্তি ঘোষাল ও অসিত বরন বিশ^াসগংরা একটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রুপ ধারন করে ফেলেছেন। এখানে লাশ সৎকার করতে আসা মানে কাড়ি কাড়ি টাকা গোনা। যাদের টাকা আছে তারা দিয়ে যান আর যাদের টাকা নেই তাদের যেন দূর্ভোগের শেষ নেই। তাই আমরা চাই মাসদাইর মহাশ্মশানটি শান্তি ঘোষাল ও অসিত বরন বিশ^াসগংদের কবল থেকে রক্ষা করা হোক।
এ বিষয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মহোদয়ের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি সনাতন ধর্মের সর্বস্তরের লোকজন।