1. [email protected] : adeleallman4077 :
  2. [email protected] : The Bangla Express : The Bangla Express
  3. [email protected] : chaslegge226479 :
  4. [email protected] : christelgalarza :
  5. [email protected] : ericblackwood3 :
  6. [email protected] : faustochauvel0 :
  7. [email protected] : gabrielewyselask :
  8. [email protected] : giuseppechambers :
  9. [email protected] : Jahiduz zaman shahajada :
  10. [email protected] : justinstella26 :
  11. [email protected] : lillieharpur533 :
  12. [email protected] : mattjeffery331 :
  13. [email protected] : minniewalkley36 :
  14. [email protected] : sheliawaechter2 :
  15. [email protected] : Skriaz30 :
  16. [email protected] : Skriaz30 :
  17. [email protected] : social84c97032 :
  18. [email protected] : user_3042ee :
  19. [email protected] : The Bangla Express : The Bangla Express
  20. [email protected] : willierounds :
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট
বুয়েট ছাত্র নিহতের ঘটনায় আসামিদের ২ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর নাঃগঞ্জ জেলা ট্রাক ট্যাংকলরী ও কার্ভাড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নে মিলাদ দোয়া অনুষ্ঠিত রূপগঞ্জে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ ফতুল্লায় পোশাক শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা, আসামি ১০ জন বন্দরে সিএসডিতে সরকারি খাল দখল ঘর নির্মাণের অভিযোগ নাঃগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের একাল-সেকালের রাজনীতি সাদপন্থি সন্ত্রাসীদের বিচার না হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে – মাওলানা আব্দুল আউয়াল শ্রমজীবী মানুষকে বাদ দিয়ে পরিবর্তন সম্ভব নয় : শামসুল ইসলাম রূপগঞ্জে জিয়াউর রহমানকে কটূক্তি করায় যুবলীগ নেতার বাড়িতে হামলা প্রভাবমুক্ত’ নির্বাচনের পথে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব

চাঁদাবাজির দখল আধিপত্য সংস্কৃতি বহাল

দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৪০ Time View
chada baji

দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু ইতিবাচক অর্জন থাকলেও তা প্রত্যাশার চেয়ে কম বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, আইনশৃঙ্খলা অবনতির পাশাপাশি দখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি থেকে এখনও বের হওয়া যায়নি। পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ, দলীয়করণের বদলে আরেক দলীয়করণে প্রতিস্থাপন, ঢালাওভাবে শত শত মামলায় অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করা, গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণের মতো বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চলমান।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনায় টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাগুলোর বিষয়ে গণমাধ্যমসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত ও বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনকে ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গতকাল সোমবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির প্রধান গবেষক শাহজাদা এম আকরাম। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অভীষ্ট লক্ষ্যের যাত্রা শুরু হয়েছে। ব্যাংক খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যায়নি। নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশন সংস্কার করলেই হবে না; রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিরও সংস্কার প্রয়োজন। কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে, এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। তবে এই সরকারের ম্যান্ডেট নির্বাচিত সরকারের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সেনাপ্রধানের ঘোষণা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে টিআইবি। বিএনপির ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক উদ্যোগের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দলের মধ্যে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি চলমান। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব বেড়েছে। হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্য কার্যক্রম দেখা গেছে। আওয়ামী লীগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার বা কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধীরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে। সরকার সমর্থিত সংগঠনের মতো ভূমিকা পালন করতেও দেখা গেছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম প্রকাশ্যে দেখা গেছে। ধর্মান্ধ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে ধর্মীয়, জেন্ডার, জাতিগত, নৃতাত্ত্বিক ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যসম্পন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ও বৈষম্যমূলক এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। হিযবুত তাহরীরের মতো দলের প্রকাশ্য কার্যক্রম চলছে।

রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার নিয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে প্রথমে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার কথা বললেও পরবর্তী সময়ে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলেছে দলটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ভারতের কূটনৈতিক পরাজয় হয়েছে বলেও মত দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক চিত্র

সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন না করা, মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু, প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের সুযোগ থাকবে না মর্মে ঘোষণা করা হয়েছে। আটটি জাতীয় দিবস পালন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চারটি ব্যাংক নোট থেকে শেখ মুজিবের ছবি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হচ্ছে, তা এখনও বিতর্কিত।

প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানকে দলীয়মুক্ত করার অংশ হিসেবে পদোন্নতি, পদায়ন, বাধ্যতামূলক অবসর, চুক্তিতে নিয়োগ বাতিল এবং চুক্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশাসনিক রদবদল করা হয়েছে। প্রশিক্ষণরত ৩৬৯ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) বিতর্কিতভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর চাপে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে অন্তর্বর্তী সরকার বাধ্য হয়েছে। এটা সিদ্ধান্ত নিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি বলে পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া বা না দেওয়ার চর্চা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হলেও সুপারিশের আগেই শেখ পরিবারের নামে প্রতিষ্ঠিত ২০ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ১০টি কমিশনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের ছয়টি কমিশনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো প্রতিনিধিত্ব না থাকা, নারীর সংখ্যা কম থাকা, সাবেক আমলার আধিক্য, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাধান্য থাকার সমালোচনা রয়েছে। এ ছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও শিক্ষা খাতের সংস্কারে কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। সংস্কার কর্মসূচিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতকেও যথাযোগ্য গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

জনপ্রশাসন

জনপ্রশাসনে সংস্কারের অংশ হিসেবে পতিত সরকারের সময় দলীয় বিবেচনায় বঞ্চিত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বদলি, পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি ও পদায়ন ঘিরে সচিবালয়ে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো কর্মকর্তার বিতর্কিত কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেছে।

যেমন– বগুড়ার নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি পরিদর্শন এবং সরকার ও প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। পদোন্নতি পাওয়াদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকা, বিভাগীয় মামলায় শাস্তি এবং আওয়ামী লীগের নানা অপকর্মের সহযোগী বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। পদোন্নতি বা পদবঞ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। সার্বিকভাবে জনপ্রশাসনে কর্মসম্পাদনে পেশাদারিত্বের ঘাটতি লক্ষণীয়।

আইনের শাসন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি হিসাবে হতাহতের সংখ্যার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। গত ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২৫৩ মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ২১৩টিই হত্যা মামলা। বেশির ভাগ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের আসামি করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী, হত্যার ইন্ধনদাতা ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১ হাজার ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্ষেত্রবিশেষে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হচ্ছে। মামলায় ঢালাওভাবে আসামি হিসেবে নাম দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলার ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককে আসামি করা হচ্ছে। মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নামেও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সরকারের বিভিন্ন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার নিয়ে লুকোচুরি দেখা গেছে।

একেকজনকে একাধিকবার একেক জায়গা থেকে গ্রেপ্তারের সংবাদ দেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের পুরোনো ধারা বিদ্যমান। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আদালতে আক্রমণের শিকার হওয়া, পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রলীগ নেত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে লাঞ্ছিত হওয়া, সাবেক বিচারপতির ওপর আক্রমণ এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীর ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

মানবাধিকার

অন্তর্বর্তী সরকার গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেছে। তবে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় করা নিয়ে উপদেষ্টাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়। কর্তৃত্ববাদের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, চাঁদাবাজি, আর্থিক খাতসহ রাষ্ট্রীয় দখলের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত গোয়েন্দা সংস্থা, যেমন– ডিজিএফআই, ডিবি, এনএসআই, এনটিএমসি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা

সরকার পতনের পর কয়েক দিন সারাদেশে পুলিশি ব্যবস্থার অনুপস্থিতি ছিল; যে কারণে অনেক থানার অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়েছে। পুলিশি কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করার ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়েছে। তবে বড় একটি অংশের বিরুদ্ধে পদোন্নতি, পদায়ন ও বদলির বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশের অনুপস্থিতি, নির্লিপ্ততা ও দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহের কারণে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সারাদেশে ছয় শতাধিক নিহত ও ১০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। বিভিন্ন আন্দোলন ঘিরে কমপক্ষে ৯০ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়েছে। সারাদেশের ৯টি কারাগারে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। অনেক বন্দি পালিয়ে গেছেন। শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা দেখা গেছে। সারাদেশে আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক সহিংসতায় নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের অপরাধমূলক তৎপরতায় জড়িত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আরেকটি দিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী, প্রান্তিক ও ভিন্ন মতের জনগোষ্ঠীর আক্রান্ত হওয়া। ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে, যেখানে ৯ জন নিহত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ২২টি জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবাদের মুখে শিল্পকলায় নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া মেলা আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন দাবিতে বেশ কয়েকটি আন্দোলন হয়েছে। এর মধ্যে সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি এবং চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনা ঘিরে চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী, প্রান্তিক ও ভিন্ন মতের জনগোষ্ঠীর আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করা, তদন্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। সামরিক বাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিলেও জবাবদিহি কার কাছে, তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যা চলমান রয়েছে।

বিচার বিভাগ

সাবেক সরকারের সময় করা মামলা ও রায় থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া হয়নি বিচারক নিয়োগের বিধিমালা। এটি হওয়ার আগেই আইন কর্মকর্তা ও বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক সরকারের সময় দায়ের করা মামলা ও রায় থেকে অব্যাহতি এবং দণ্ড মওকুফের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থ পাচার রোধ

দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও এর মধ্যে দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগ করার ফলে সংস্কারের আগেই এসব পদে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা

তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রমাগত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকের মাসিক হাজিরা বোনাস, টিফিন ও রাত্রিকালীন ভাতা বাড়ানো, নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়নসহ ১৮ দফা বাস্তবায়নে মালিকপক্ষ সম্মতি দিলেও তৈরি পোশাকশিল্পে বিশৃঙ্খলা এখনও চলমান। সরকারের শুরুর দিকে সংকট থাকলেও ধীরে ধীরে রপ্তানি বেড়েছে। তবে আন্দোলন ও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীর গতি লক্ষ্য করা যায়।

ব্যাংক খাত ও শেয়ারবাজার

ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করার কথা বলা হলেও এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এদিকে বিভিন্ন উদ্যোগের পরও শেয়ারবাজার এখনও অস্থিতিশীল।

মূল্যস্ফীতি

সুদের হার ও ডলারের দামের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে বলে দেখা যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও ইতিবাচক কিছু দেখা যাচ্ছে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনও অনেক বেশি।

আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ

কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এসব দেশ ও সংস্থার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, চীন, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে মানবাধিকার সুরক্ষা, সহিংসতার ঘটনার পূর্ণ এবং স্বাধীন তদন্তের প্রয়োজনীয়তা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা এবং সব শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীকে মুক্ত করা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান এবং সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মনোভাব ইতিবাচক হলেও বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের মতো সংস্থার ঋণ সহায়তা-সংশ্লিষ্ট শর্তাবলি, বিশেষ করে ইতোমধ্যে সুদসহ ঋণ পরিশোধের অতিরিক্ত দায় সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।

রাজস্ব সংগ্রহ

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৩০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। এমনকি আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আয়কর– এই তিন খাতের কোনোটিতেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা

সব মিলিয়ে ১২ সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৬০ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সারাদেশের সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র– স্থানীয় সরকারের এই চার স্তরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৭৬ জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের জায়গায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা বিঘ্নিত।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

সরকারের দোসর ও আন্দোলনের বিরোধিতা করার অভিযোগে ঢালাওভাবে ১৬৭ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই সময়েই গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ, হুমকি-হামলাসহ কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকিস্বরূপ। সাইবার নিরাপত্তা আইনে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে মামলা কেন নেওয়া হলো– তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2019 LatestNews
DESIGNED BY RIAZUL