দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন,নারায়ণগঞ্জে অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে আমাকে চলতে হয়। ২০১১ সালে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। সেদিন অনেকেই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো। যেদিন আমি সিটি কর্পোরেশনে দায়িত্ব নেই সেদিন আমি একটা বক্তব্যে বলেছিলাম ‘জয় বাংলা জাতীয় শ্লোগান’। এটা বাঙালীর শ্লোগান,মুক্তিযোদ্ধাদের শ্লোগান কিন্তু আওয়ামী লীগ এটাকে কুক্ষিগত করেছে। সুতরাং এই শ্লোগান জাতীয় শ্লোগান হওয়া উচিত।
কারন এটা আমাদের স্বাধীনতার প্রতিক।সেদিন আমার এই বক্তব্যকে কাটপিস করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছিলো।দল থেকে বহিষ্কারের প্রস্তুতি চলছিলো নারায়ণগঞ্জ থেকে। আজকে কিন্তু সেই শ্লোগান হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েছে ‘জয় বাংলা’আমাদের রাষ্ট্রীয় শ্লোগান। যেটা আমাদের অধিকার এই জনগনের রাষ্টের সেটা তো আস্তেই হবে। এই পৃথিবীর যেখানেই আনাচেকানাচে বাঙালী বাস করে সেখানেই ত্বকীকে নিয়ে কথা হয়।ত্বকীকে সবাই চিনে। ত্বকী আমাদের প্রতিবাদের দল,ত্বকী আমাদের প্রতিবাদের ভাষা,ত্বকী আমাদের সাহস জোগায়। সুতরাং এই হত্যাকান্ডের বিচার হবে, হবেই।
শুক্রবার(১৮ মার্চ)বিকেল ৪টায় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী’র ২৬ তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সপ্তম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্গন ও রচনা প্রতিযোগিতা ২০২১ এর পুরুষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মেয়র।
এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,নাসিক মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী,বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক শওকত আরা রহমান,কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ,জাহিদুল হক দিপু,রথীন চক্রবর্তী,ভবানী শংকর রায়,ধীমান সাহা জুয়েল,লক্ষী রানী,নিখিল দাস,পপি রানী সরকার,সুলতানা আক্তার সহ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী অভিভাবকরা।
নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন,ত্বকীকে নিয়ে অনেক কবিতা, গল্প লেখা হয়েছে কিন্তু নির্মম সত্য হলো যে ত্বকী হত্যার আজকে ৯ বছর হয়ে গেলো এখনো বিচার হলো না। ত্বকী হত্যার কেনো বিচার হচ্ছে না কারন এই হত্যাকান্ডে প্রভাবশালী পরিবার জড়িত। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি সদয় হয় তাহলে ত্বকী হত্যার বিচার সম্ভব। যে পর্যন্ত ত্বকী হত্যার বিচার না হবে সে পর্যন্ত আমরা ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে যাবো। ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতির বাসায় বোমা হামলা করা হয়েছে।
মেয়র আরো বলেন,২০১৩ সালে যখন ত্বকী হত্যা করা হয় ত্বকীর বাবা তার ছেলের হত্যার বিচার চায়।এমন কোন শব্দ নাই যে ত্বকীর বাবাকে বলা হয় না।আমাকে এমনভাবে হেনস্তা চেষ্টা করা হয়েছিলো। ত্বকী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত পারভেজ ওসমান পরিবারের কর্মী। ত্বকীকে কি করা হয়েছিলো,কোথায় করা হয়েছিলো পারভেজ সব জানতো। তাই গুম করে হত্যা করা হয়েছিলো। সেই হত্যাকান্ডে আমার আপন ছোট ভাই,মামাতো ভাই,আমার বোনের ছেলে নর্থ সাউথ ইউনিভারসিটিতে পড়তো ও সহ আমার ৭জন কর্মীকে বিনা কারনে জেল খাটতে হয়েছে।
পারভেজ হত্যার পর গর্বের সাথে সেই পরিবার বলেছে দেখিয়ে দিলাম। ত্বকী মঞ্চের সাথে আমরা যারা জড়িত প্রত্যেককে কোন না কোনভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের একটা মানুষও ত্বকী হত্যার বিচার থেকে পিছিয়ে নেই কারন একটাই আমরা আমাদের সন্তান ত্বকী হত্যার বিচার চাই। ত্বকীর হত্যার পর তার বাবা আমাদের সহায়তা চেয়েছে আমরা তাই তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। ত্বকীর বাবা মার মত এমন সাহসী বাবা মা প্রয়োজন প্রত্যেকটা জায়গায়। এই মঞ্চে আমরা যারা আছি যত ঝড়ঝাপটা হোক না কেনো আমরা সবাই এক সাথে থাকবো।আমরা সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো যত ষড়যন্ত্র হোক না কেনো। নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার বিচার আমরা করেই ছাড়বো।
প্রতিযোগিতাদের উদ্দেশ্যে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন,এখানে আজকে আমরা হত্যাকান্ডের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।এটা আমাদের করতেই হবে।সকল অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে সাহসের সাথে। কিছু কিছু হত্যাকান্ড আমাদের সাহস দেখিয়ে যায় অনেক কিছু শিখিয়ে যায়। ত্বকী আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে। ও দেশ নিয়ে কথা বলেছে,মানুষ নিয়ে কথা বলেছে ও কবিতার মাধ্যমে অনেক কিছু বলেছে গেছে।ত্বকী হত্যাকান্ডের পর নারায়ণগঞ্জে এখন অনেক হত্যাকান্ড কমেছে।ভয় পেয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলায় অনেক হত্যাকান্ড,লুটপাত, জোরপূর্বক দখল হয়েছে। কিন্তু ত্বকী আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে প্রতিবাদী হতে। বক্তব্য শেষে চিত্রাঙ্গন ও রচনা প্রতিযোগিতার ৬ ক্যাটাগরিতে মোট ৬০ জনের হাতে পুরুষ্কার তুলে দেওয়া হয়।