দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকম: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে হয়রানি ও ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। সেবাগ্রহীতারা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উৎকোচ গ্রহণসহ অফিসকক্ষ বন্ধ করে সেবার নামে কালক্ষেপণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রীতিমতো অঘোষিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে সেখানে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে অফিসের কর্মচারীরা। দালাল ছাড়া কেউ অফিসে সেবা নিতে গেলে শুরু হয় নানা টালবাহানা ও হয়রানি। চাহিদামতো টাকা না দিলে হয়রানির যেন অন্ত নেই।
উপজেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী ও অনিয়মের নানা অভিযোগ উঠেছে, টাকা না দিলে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের। সব মিলিয়ে অফিসটি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
ভোটার জটিলতার কারনে নাগরিক নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন মানুষ। ভোটার স্থানান্তর, নাম সংশোধন, নতুন ভোটার তালিকায় অর্šÍভুক্তির আবেদন করে মাসের পর মাস ঘুরেও কোন ফল পাচ্ছেনা। এতে বেড়েই চলেছে মানুষের ভোগান্তি , বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। ওপর মহলকে ‘বশ’ করে সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে বছরের পর বছর ওই নির্বাচন কর্মকর্তা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন।
অনেকেই নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, নির্বাচন কর্মকর্তার একক নিয়ন্ত্রণে চলে এ অফিস। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার ছত্রচ্ছায়ায় সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করছেন। ঘুষ বাণিজ্যের কাজও তিনি করেন নিয়মিত। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিলে এনআইডি কার্ড প্রণয়ন, সংশোধন, প্রদানসহ নানা কাজে জটিলতা সৃষ্টি করছেন তারা।
সরেজমিন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের দিকে নির্বাচন অফিসের সামনে ও বিভিন্ন কক্ষের ভেতর সেবাগ্রহীতাদের ঘুরতে দেখা যায়। নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। নতুন আইডি কার্ড করতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বেশ কয়েকজন সেবাগ্রহীতা এসেছেন।
বেশ কয়েকজন দালাল অফিসের ভেতরে অবস্থান করে। সেবা গ্রহীতারা দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই মেলে কাজের রাস্তা। দালালদের অধিকাংশই নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারীদের যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানা যায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি জেলা নির্বাচন অফিসার কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ হজ¦ পালন করতে দেশের বাইরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত জেলা নির্বাচন অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পান সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার আফরোজা খাতুন। মুলত এই অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচন অফিসে ব্যাপক পরিসরে শুরু হয় নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য দাবি সেবাপ্রত্যাশীদের। ভোটার হস্তান্তর, এনআইডির নাম সংশোধন ও বয়স সংশোধনে ঘুষের জন্য সাধারণ নাগরিকদের করা হয় ব্যাপক হয়রানি।
কম্পিউটার অপারেটর, পাসপোর্ট অফিসের দালাল, নামধারী সংবাদ কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনের দালালি শুরু হয় গুরুত্বপূর্ণ এ অফিসটিকে কেন্দ্র করে। এ অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আসা একজন বলেন, আমার নামের বানান সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসের লোকজন আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার অনেক বাকবিতÐা হয়। পরে দুই হাজার টাকা দিয়ে তা সংশোধন করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবা প্রত্যাশী বলেন, নির্বাচন অফিস মানেই শুধু টাকা আর টাকা। আগে শুনতাম কোর্ট-কাচারীর ইট-বালুও নাকি টাকা খায়, আর এখন দেখছি এই নির্বাচন অফিসের কদমে কদমে টাকা দিতে হয়। টাকা ছাড়া ঠিকভাবে কেউ কোনো কথা শুনতে চায়না, বলতেও চায়না।
তিনি বলেন, গত ২বছর আগে আমি নির্বাচন অফিসে গিয়ে আমার সমস্যার কথা বললে তারা আমাকে কিছু পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী আমি কোর্টে এফিডেভিটসহ যাবতীয় কাগজপত্র অফিসে জমা দিই। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ থেকে ১২দিন ঘোরাঘুরি করছি। যখনই যাই তখনি বলে সামনের মাসে আসেন। গত কয়েকদিন আগেও গিয়েছিলাম। নতুন করে আবার কাগজ চাইলে রাগে ক্ষোভে আর আইডি কার্ড না বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নতুন ভোটার হতে আসা এক তরুণী বলেন, তাকেও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুষের টাকা দিলে কোনো ঝামেলা নেই। ভোটার ফরম গ্রহণ, জমা, ফিঙ্গার দেওয়াসহ সব জায়গায় ভোগান্তিতে পড়েছি। অফিসারকে তো পাই না। কর্মচারীরা এখন-তখন করে মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছে। নতুন ভোটার হতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেছি।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, জাতীয় পরিচয় পত্রের ¯িøপ হারিয়ে গেলে আমার ভোটার নম্বর ও জন্মনিবন্ধন কার্ডসহ আমি নির্বাচন অফিসে যাই। অফিসের একজন আমাকে বলেন, যে নতুন শ্লিপ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া যাবে না। তাই নতুন করে ৩৫০ টাকা ব্যাংক চালান লাগবে। আমি চালান করতে ব্যাংকে যেতে চাইলে তিনি বলেন আমাকে টাকা দিয়ে দেন। আমি চালান করে নিব। কিন্তু টাকা দেয়ার পর আমার জাতীয় পরিচয় দিয়ে টাকা দেয়ার কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার আফরোজা খাতুন বলেন, আমাদের অফিসের চারপাশে দালাল ঘুরতেছে, টাকা-পয়সাগুলা সম্ভবত তারা ঝামেলা করছে। ইদানিং কিছু দালাল যারা পাসপোর্ট অফিসে কাজ করে, তার সাথে মিলে অন্য একজনের বাবা-মা বানিয়ে তাদের নামে জন্মনিবন্ধন করে আমার কাছে ভোটার করতে পাঠাচ্ছে। এখানে সরকারি ফি এর বাইরে কোনো টাকা লাগে না।