দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহার পদত্যাগ, অসুস্থতার বাহানায় পালালেন স্কুল ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস সালাম।
২০ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে শহরের ভুইয়ারবাগে অবস্থিত বিদ্যালয়ের সামনে সড়কে অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মূল ফটকের সামনে গিয়ে জোড় হয়ে আন্দোলন শুরু করে। এসময় বেতন বেশি আদায় , ছাড়পত্রের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় ,অতিরিক্ত পরীক্ষা ও ফিস নেওয়া, স্কুলের অনুষ্ঠানে জোড় পূর্বক আটকে রাখা ,ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি ,অনুপস্থিতির জরিমানা ৫০০ টাকা করে আদায় , অভিভাবকদের সাথে অশালীন আচারণ করে , ষষ্ঠ থেকে নবন শ্রেনী পর্যন্ত কারিকুলাম স্থগিত করা হয়নি,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করা মোট ১১ দফা দাবী সহ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলায় এবং তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করায় প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা ও স্কুল ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় আন্দোলনরত ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলা এবং ছাত্রদের কলার ধরে নিয়ে আটকে রাখেন শিক্ষক সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা। এছাডাও প্রাথমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের আটকে রাখেন স্কুলের শিক্ষকরা এবং এতে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ভয় পেছেন বলে অভিযোগ তুলেন অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের প্রতিবাদ জানাতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও ট্রাস্টি বোর্ড এর সদস্যরা এসেও আন্দোলনে যোগ দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথমত আমাদের স্কুলে বেতন বেশি নেওয়া হয়। তারপর যেকোন বিষয়েই জরিমানা ধরে আমাদের নাজেহাল করে। প্রতি মাসে চারটা করে পরীক্ষা দিতে হয়। দুই পেইজের একটা খাতা দেয় পরীক্ষার জন্য তার জন্য আমাদের থেকে ৩০০শত করে টাকা নেওয়া হয়। কেউ যদি অসুস্থ্য হয় এবং স্কুলে যেতে না পারে তাহলে তাকেও ৫০০ টাকা করে জরিমানা দেওয়া হয়। আমরা তো আর রোবট নই।
আমাদের অসুখ বিসুখ হতেই পারে কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের থেকে জরিমানা ধরে।কেউ যদি ছাড়পত্র আনতে যায় তার জন্যও টাকা দিতে হয়।ছাড়পত্রের জন্য কোন টাকা লাগে না অন্য স্কুলে কিন্তু এখানে দিতে।কেউ পরীক্ষার সময় বেতন ও পরীক্ষার ফিস কমাতে গেলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এমনকি আমাদের অভিভাবকদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে প্রধান শিক্ষক। আর অনেকগুলো স্যার মেডাম আছে তারা যেকোন বিষয়েই জরিমানা ধরে তা স্কুলে দেয় না নিজেরা নিয়ে যায়। এই যে এত এত জরিমানা,বেতন বেশি,এত পরিমান পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তার টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়?
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ তুলে বলেন,স্কুলে কোন অনুষ্ঠান হলেও আমাদের কাছ থেকে চাঁদা ধরা হয়। যেকোন অনুষ্ঠানে আমাদের আটকে রাখে। সবকিছুতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। সেই সাথে আমাদের গায়েও হাত তুলে। আজকে আমরা আন্দোলন করবো বলে রাতে সালাম স্যার আর উত্তম স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে বাজেভাবে ব্যবহার করেছে এবং হুমকিও দিয়েছে।
স্কুলের এক দাতা সদস্য জানান,আমরা তো স্কুল করছি আমাদের বাচ্চাদের মানুষ বানানোর জন্য। নিজেদের জায়গা দিয়ে বাড়িঘর ভেঙে স্কুল করতে দিছি। নিজেদের টাকা দিয়ে স্কুল করছি। ওই কাশেম, সালাম, হুমায়ন ওদের তো কোন টাকা নাই এখানে আর এখানে ওদেরও কোন অবদানও নেই। আওয়ামী লীগ আসার পর ওরা জোর করে এই ট্রাস্ট কমিটিতে আসছে। আমরা আমাদের টাকা ও জায়গা দিয়ে স্কুল করছি বাচ্চাদের মানুষের মত মত মানুষ বানাতে কিন্তু ওরা এত পরিমান জরিমানা আর টাকা নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই স্কুল যেন ওদের বাপদের। তাই আমরাও চাই সালাম আর প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার পদত্যাগ করুক।
স্থানীয় অভিভাবক মোহাম্মদ ফিরোজ বলেন,এই স্কুল আমাদের।নিজেদের টাকায় এই স্কুল করা বাচ্চাদের পড়ালেখার জন্য। ওরা এই স্কুলকে ব্যবসা বানিয়ে ফেলছে। ওরা কথায় কথায় জরিমানা আর অতিরিক্ত টাকা নেয় সব কিছুতে। খোঁজ জিয়ে দেখেন কাশেমের দুই ভাই দুই ব্যাংকের টাকা খাইয়া শেষ করছে। আর সালাম তো বুকে থাপ্পুড় দিয়ে বলে ওর দুই কোটি টাকা আছে ব্যাংকে। সে এই টাকা পেলো কোথা থেকে। এই স্কুলের টাকা এরা আত্মসাৎ করে খাচ্ছে। তাই আমরাও শিক্ষার্থীদের আজকের যৌত্তিক দাবীতে আন্দোলনে একতা প্রকাশ করতে এসেছি।
শিক্ষার্থীদের সাথে থাকা উপস্থিত অভিভাবকরা জানান,আমার সন্তানরা আজ যৌত্তিক দাবীর জন্য আন্দোলন করতাছে। এই স্কুল থেকে সব কিছুতেই অতিরিক্ত জরিমানা,বেশি বেশি পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফিস,বেতন বেশি, যেকোন বিষয়ে জরিমানা ও বাচ্চাদের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলে যেকোন বিষয়ে। আমরাও চাই এই প্রধান শিক্ষক ও সালামের পদত্যাগ। আজকেও আন্দোলন করতাছে বলে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলছে কিছু শিক্ষক।
একজন শিক্ষক হয়ে তো ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতে পারে না। ছাত্রদের কলার ধরে নিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারে না। আমরা প্রধান শিক্ষক ও সালামের পদত্যাগ চাই।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের এই যৌত্তিক দাবীকে সমর্থন জানিয়ে স্কুলে আসেন স্কুল ট্রাস্টি বোর্ড এর অনন্যা সদস্য ও অভিভাবকরা। তারাও প্রধান শিক্ষক ও আব্দুস সালামের পদত্যাগ দাবী করে। এনিয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরে শিক্ষার্থী, স্থানীয় অভিভাবক ও স্কুল ট্রাস্টি বোর্ড এর সদস্যদের তোপের মুখে পড়ে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন উত্তম কুমার সাহা। অসুস্থতার বাহানা ধরে পদত্যাগ থেকে বাছতে পালান আব্দুস সালাম।
স্কুল ট্রাস্টি বোর্ড এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করে অসুস্থতার বাহানায় পালিয়ে যাওয়ায় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এসে আন্দোলন করে।