দ্যা বাংলা এক্সপ্রেস ডটকমঃ সোনারগাঁয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নবনির্মিত ৯টি শিল্প কারখানা উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে মেঘনা ইকোনমিক জোনে ৩টি, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে ৩টি, আনন্দবাজারে ২টি ও মেঘনাঘাটে ১টি শিল্প কারখানার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার এন্ড কমার্স (এফবিসিসিআই) এর প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন.মেঘনা গ্রুপ দেশের অর্থনৈতিতে বেশ গ্ররুত্বর্পূন ভূমিকা পালন করছেন। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এ ধারা বাহিকতা বজায় রাখার জন্য প্রধান অতিথি বক্তব্য তিনি অহবান জানান ।
তিনি আরো বলেন, মেঘনা গ্রুপের মতো দেশে আরো যারা উদ্যোক্তা রয়েছে তাদের জন্যই আজ দেশে অনেক কর্মসস্থান সৃষ্টি হচ্ছে । শেখ হাসিনা সরকার সব সময় ব্যবসায়ীদের পাশে আছেন বলেই তার সফলভাবে ব্যবসা করতে পারছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এই দেশটা আমাদের বড় রক্তের বড় দানের কিনা। যখন পাকিস্তানের ছিলাম আমরা সে পাকিস্তানকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমরা স্বাধীন অর্জন করে বাংলাদেশ পেয়েছি। পাকিস্তান আমলে কয়জন শিল্প উদ্যোক্তা ছিলো আজ দেখেন কত জন উদ্যোক্তা আছে । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন শুধু সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে । আজ এ স্বাধীনতার কারণে আমরা চাকরি দিতে পারছি ও বড় বড় উদ্যোক্তা জন্ম হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো কিন্তু শুধু তাকেই হত্যা করেনি স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও চেতনাকে হত্যা করেছে। কেউ কেউ বলে কিছু বিপদগামী সামরিক কর্মকর্তরা তাকে হত্যা করেছে। আমি তা ভাবি না , আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে শুধু স্বাধীনতার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয় স্বাধীনতা সকল মূল্যবোধকে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য । বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি অনেক দুর এগিয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর সবচয়ে গতিশীল অর্থনীতি আমাদের । আজ দেশ উন্নতি হয়েছে যাদের অবদানে আমরা অর্থনীতিভাবে এ দুর এগিয়ে যেতে পেরেছি তাদের মধ্যে একজন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল।
নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতো তাহলে আমরা স্বাধীনতা ৪৮ বছর পর নয় মেঘনা গ্রুপ ৩০ বছর আগেই প্রতিষ্ঠিত হতো। বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য বাস্তবায়নের শেখ হাসিনা সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী । কোন দেশের লোক আমাদের অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি যারা এ দেশকে পিছনে নিয়ে যেতে চায় তারাই সমালোচনা করেন ।
উদ্বোধন হওয়া প্রতিষ্ঠান গুলো হলো- মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড: জার্মান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, চীন এবং ভারতের সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এ কারখানায় বাংলাদেশে প্রথম দানাদার চিনির সঙ্গে তরল চিনি উৎপাদিত হচ্ছে। দৈনিক ৩৫০০ টন উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এ শিল্পে ১০০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নেপাল এবং ভুটানে এ পণ্য রফতানি করা হবে।
সোনারগাঁ সিড ক্রাশিং মিলস্ লিমিটেড: জার্মানী, সুইডেন, ব্রাজিল, ইতালি, চীন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং থাইল্যান্ডের আধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত বাংলাদেশের বৃহত্তম এ সিড ক্র্যাশিং মিলে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত লিকুইড লেসিথিনের পাশাপাশি পাউডার লেসিথিন এই কারখানা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে, যা বেকারি, ঔষধ শিল্প কারখানা, ডেইরি এবং ফিড এর অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত। এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক সাড়ে পাঁচ হাজার টন। এখানে ৩০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ, ভারত এবং চীনে এ পণ্য রফতানি করা হবে।
মেঘনা বলপেন অ্যান্ড এক্সেসরিজ এমএফজি লিমিটেড: দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং ভারতের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনে উন্নতমানের বলপেন তৈরির এ কারখানায় প্রতিদিন ৮ লাকক বলপেন উৎপাদিত হচ্ছে। দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নেপাল এবং ভিয়েতনামে এ বলপেন রফতানির সুযোগ রয়েছে। এখানে ৩০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
মেঘনা নুডলস অ্যন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড : জাপান, টনি এবং ইউরোপের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রস্তুত এ শিল্পে বাৎসরিক ৪০,০০০ টন বিস্কুট, ১,৯০০ টন কেক, ২০,০০০ টন নুডলস, ৪,০০০ টন ওয়েফার, ৮,০০০ টন চকলেট, ৪,০০০ টন প্রেস, ১২,০০০ টন চানাচুর, ৬,৫০০ ক্যান্ডি ও ললিপপ তৈরি হচ্ছে। এখানে ৪,০০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
সোনারগাঁ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড: চীন এবং ভারতের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনারি দ্বারা নির্মিত এ কারখানা মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রিন্টিং এবং প্যাকেজিং সল্যুশন হিসাবে কাজ করবে। দৈনিক ৪,৪২,০০০ পিস কার্টুন ও প্যাকেট উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এ কারখানায় ৪৫০ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
ফ্রেশ ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রডস অ্যন্ড ওয়্যার: তুরস্ক, চীন এবং ভারত থেকে আমদানিকৃত সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা প্রস্তুত বাংলাদেশে প্রথম ওভেন সিস্টেম ওয়েল্ডিং ইলেকট্রডস (প্রতিমাসে ১০০ টন) ও ফ্লাথ কোর আর্ক ওয়েলিং ওয়্যার (প্রতিমাসে ৪০০ টন) এখানে তৈরি করা হচ্ছে। এখানে ১০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি লিমিটেড: সর্বাধুনিক ইউরোপিয়ান মেশিনারি দ্বারা স্থাপিত এ কারখানা এলপিজি সিলিন্ডার প্রস্তুত এবং এলপিজি বোতলজাত করার একক বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান। এখানে ১০,০০০ টন এলপিজি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম রয়েছে, যা বাংলাদেশে এলপিজি’র বৃহত্তম স্টোর হাউজ হিসেবে বিবেচিত। এর উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৩০০ টন এবং ১২ কেজি পরিমাণ সিলিন্ডার দৈনিক ৪,০০০ পিস। এখানে ৩৫০ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
সোনারগাঁ শিপ বিল্ডার্স এন্ড ইয়ার্ড লিমিটেড: নৌপথে পণ্য পরিবহণ সুগম রাখার জন্যে ইউরোপ এবং চীনের সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা নির্মিত এ কারখানায় ৫০০০ উডঞ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অয়েল ট্যাংকার, কার্গো শিপ, বাল্ক শিপ, গ্যাস শিপ, কন্টেইনার শিপ প্রভৃতি তৈরি করা হয়েছে। দেশীয় চাহিদার পাশাপাশি ইউরোপে এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ জাহাজ রফতানির সুযোগ রয়েছে। এখানে ১,৫০০ দক্ষ জনবলের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ফ্রেশ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (ইউনিট-২): জার্মানির সর্বাধুনিক মেশিনারি দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্মিত এ কারখানায় উন্নত মানসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব সিমেন্ট উৎপাদিত হচ্ছে। এখানে দৈনিক ১০,০০০ টন সিমেন্ট উৎপাদনসহ ১,০০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এ সিমেন্ট দেশীয় চাহিদা যোগান শেষে ভারতেও রফতানির সুযোগ রয়েছে। এই ৯টি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।